ভারতীয় চালের দাম বেড়ে পাঁচ বছরের সর্বোচ্চে

সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-০৭-০২ ০৮:৪৯:৩৩


সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ভারতে অব্যাহত কমছে চাল সরবরাহ। বৈরী আবহাওয়া ও অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সরবরাহ সংকটের উদ্বেগে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে দেশটির চালের রফতানি মূল্য। সর্বশেষ চলতি সপ্তাহে দেশটিতে চালের দাম বেড়ে পাঁচ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে চালের দাম দুই বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে। খবর বিজনেস রেকর্ডার।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কৃষকদের ওপর সরকারের কাছে বাধ্যতামূলক ধান বিক্রি করার শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আগের তুলনায় বেশি দামে ধান কেনা হচ্ছে। ফলে স্থানীয় বাজারে চালের দাম বেড়ে গেছে। এ বিষয়ও ভারতীয় চালের রফতানি মূল্য বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করেছে।

চলতি সপ্তাহে ভারত প্রতি টন ৫ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চাল ৪০৯-৪১৬ ডলারে রফতানি করছে, যা ২০১৮ সালের মে মাসের পর সর্বোচ্চ। এ নিয়ে টানা পঞ্চম সপ্তাহের মতো দাম বাড়ল। গত সপ্তাহে দেশটি একই জাতের চাল ৩৯৭-৪০৫ ডলারে রফতানি করেছিল।

রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট বি ভি কৃষ্ণ রাও বলেন, ‘চালকলগুলোয় ধানের অপ্রতুল সরবরাহের কারণে চালের দাম অব্যাহত বাড়ছে। বেশি দামের কারণে আফ্রিকান ক্রেতাদের কাছে চালের চাহিদাও দুর্বল হয়ে পড়েছে। জুনের শুরুর দিকে ভারত সরকার কৃষকদের থেকে সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত ধানের দাম ৭ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় বলেও জানান তিনি।’

থাইল্যান্ড চলতি সপ্তাহে প্রতি টন ৫ শতাংশ ভাঙা চাল ৫১৫ ডলারে রফতানি করছে, যা ২০২১ সালের মার্চের পর সর্বোচ্চ। গত সপ্তাহে দেশটি প্রতি টন রফতানি করেছিল ৫০৫ ডলারে।

ব্যাংককভিত্তিক ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতীয় চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোয় থাই চালের চাহিদা বেড়েছে। এদিকে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন থাইল্যান্ড থেকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করেছে। এ বিষয়ও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে।

জানুয়ারি-মে পর্যন্ত থাইল্যান্ড ৩৪ লাখ ৭০ হাজার টন চাল রফতানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। বৈদেশিক বাজারে উচ্চচাহিদা ও থাই মুদ্রা বাথের মূল্যমান দুর্বল হয়ে যাওয়ায় রফতানি বেড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

রয়টার্সের প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ২০২৩ সালে সামগ্রিক রফতানি ৮০ লাখ টনে ঠেকতে পারে। ফলে রফতানির পরিমাণ মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের প্রধান রোনারং ফুলপিপাট।

এদিকে ভিয়েতনাম চলতি সপ্তাহে প্রতি টন ভাঙা সেদ্ধ চাল ৫০০-৫১০ ডলারে বিক্রি করছে, এপ্রিলের একই সপ্তাহের তুলনায় যা সর্বোচ্চ। গত সপ্তাহে দেশটি ৪৯৫-৫০৫ ডলারে চাল রফতানি করেছিল।

হো চি মিন সিটিভিত্তিক এক ব্যবসায়ী জানান, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমদানিকারক দেশগুলো চালের মজুদ বাড়াচ্ছে। এ কারণে বর্তমানে চালের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী।

সরকারি তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভিয়েতনামের চাল রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। তবে বার্ষিক চাল রফতানি লক্ষ্যমাত্রা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভিয়েতনাম। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটি রফতানির পরিমাণ ৪০ লাখ টনে নামিয়ে আনবে, যা বর্তমান সময়ের তুলনায় অন্তত ৪৪ শতাংশ কম। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে দেশটির সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করে।

ভিয়েতনাম বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ চাল রফতানিকারক। ভারত ও থাইল্যান্ডের পরই দেশটির অবস্থান। গত বছরও দেশটি ৭১ লাখ টন চাল রফতানি করেছে। তবে আগামী বছরগুলোয় রফতানি এর চেয়ে অনেক কমিয়ে আনা হবে। উদ্দেশ্য স্থানীয় খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি উচ্চমানসম্পন্ন চাল রফতানি বাড়ানো।

সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে ২০৩০ সাল নাগাদ চাল রফতানি থেকে দেশটির বার্ষিক আয় কমে ২৬২ কোটি ডলারে নামতে পারে, যা গত বছর ছিল ৩৪৫ কোটি ডলার।

এনজে