মৌসুমী ফল আমের ভরা মৌসুম চলছে এখন। ছোটো বড় সব বয়সী মানুষের কাছেই এটি একটি জনপ্রিয় ফল। তবে এই সুস্বাদু ও জনপ্রিয় ফলটিই মানুষ খেতে ভয় পাচ্ছে এতে ফরমালিন ও কীটনাশক মেশানোর কারণে। তাই মানুষ মন চাইলেও ইচ্ছামতো আম খাওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখছেন। তবে কৌশলে ও খেয়াল করে বাজার থেকে কীটনাশক ও ফরমালিনবিহীন আম কিনতে হবে। এজন্য কিছু কৌশল ও সেইসঙ্গে আম কেনার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ফরমালিনমুক্ত আম চেনার উপায় নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো :
ফরমালিনমুক্ত আম দেখতে যেমন হয় : কীটনাশক এবং ফরমালিনমুক্ত আমে কাচাপাকা রং হয়। আমের গায়ে সাদাটে ভাব থাকবে; কালো কালো দাগও থাকবে। আমের বোটায় সুঘ্রাণ থাকবে। মুখে দিলে টক-মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যাবে। আমে মাছি বসবে। আবার কিছু আম আছে যা পাকলেও রং সবুজই থাকে। এদের গায়ে কালো কালো দাগ থাকবে। সুঘ্রাণ থাকবে।
আর ফরমালিনযুক্ত আম দেখতে যেমন হয় :
আমগুলো দেখতে সম্পূর্ণ হলুদ হবে। দেখতে খুব সুন্দর হবে। চকচকে দেখা যাবে। কোনো দাগ থাকবে না, মোলায়েম দেখাবে। কোনো ঘ্রাণ নাই বরং হালকা দুর্গন্ধ থাকবে। কোনো স্বাদ থাকবে না। আমের উপর কখনো মাছি বসে না।
সতর্কতার জন্য বাজার থেকে ফলমূল ও সবজি কিনে এনে সেগুলোকে ৩০ মিনিট লবণ অথবা ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ভালো পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
ফরমালিন কী?
ফর্মালিন (-CHO-)n হল ফর্মালডিহাইডের (CH2O) পলিমার। ফর্মালডিহাইড দেখতে সাদা পাউডারের মতো। এটি পানিতে সহজেই দ্রবনীয়। শতকরা ৩০-৪০ শতাংশ ফরমালিনের জলীয় দ্রবনকে ফরমালিন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। সাধারণত টেক্সটাইল, প্লাষ্টিক, পেপার, রং, কনস্ট্রাকশন ও মৃতদেহ সংরক্ষণে ফরমালিন ব্যবহৃত হয়। ফরমালিনে ফরমালডিহাইড ছাড়াও মিথানল থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। লিভার বা যকৃতে মিথানল এনজাইমের উপস্থিতিতে প্রথমে ফরমালডিহাইড এবং পরে ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়। দুটোই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ফরমালিনের ক্ষতিকর দিক:
১. ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনাকে আক্রান্ত করে। এতে ধীরে ধীরে রেটিনার কোষ ধ্বংস হয়। ফলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
২. ফরমালিন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, কারবাইডসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে পেটের পীড়া, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বদহজম, ডায়রিয়া, আলসার, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ হয়।
৩. এসব রাসায়নিক পদার্থ ধীরে ধীরে লিভার, কিডনি, হার্ট, ব্রেন সব কিছুকে ধ্বংস করে দেয়। লিভার ও কিডনি অকেজো হয়ে যায়। হার্টকে দুর্বল করে দেয়। সেইসঙ্গে স্মৃতিশক্তি কমে যায়।
৪. ফরমালিন ও অন্যান্য কেমিক্যাল সামগ্রী সব বয়সী মানুষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ফরমালিনযুক্ত দুধ, মাছ, ফলমূল এবং বিষাক্ত খাবার খেয়ে দিন দিন শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। কিডনি, লিভার ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট, বিকলাঙ্গতা, এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে শিশু-কিশোররা। শিশুদের বুদ্ধিমত্তা দিন দিন কমছে।
৫. গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত দোষত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে।
সানবিডি/ঢাকা/আহো