ফের কমেছে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম
সানবিডি২৪ প্রকাশ: ২০২৩-০৭-১২ ০৯:৩১:২৬
বৈশ্বিক বাজারে আবারো কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম।জুনে দাম কমে দুই বছরের সর্বনিম্নে নেমেছে। চিনি, ভোজ্যতেল, দানাদার খাদ্যশস্য ও দুগ্ধপণ্য দাম কমার ক্ষেত্রে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মাসভিত্তিক মূল্যসূচক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এফএও প্রতি মাসেই খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া পণ্যের ওপর ভিত্তি করে মূল্যসূচক তৈরি করা হয়। মে মাসে সূচক ছিল ১২৪ পয়েন্ট। জুনে তা কমে ১২২ দশমিক ৩ পয়েন্টে নেমেছে।
জুনে যে সূচক দাঁড়িয়েছে তা ২০২১ সালের এপ্রিলের পর সর্বনিম্ন। গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম নজিরবিহীন বেড়ে যায়। সে সময়ের তুলনায় জুনে দাম কমেছে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
মূল্যসূচক অনুযায়ী, জুনে দানাদার খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক দাম আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে টানা পঞ্চম মাসের মতো কমেছে ভুট্টার দাম। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। ভুট্টা তোলার মৌসুমের কারণে জুনে দেশ দুটি থেকে শস্যটির সরবরাহ ব্যাপক বেড়ে যায়। খরার উদ্বেগের মধ্যেও গত মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের হার ছিল ইতিবাচক। বিষয়টিও ভুট্টার বাজারে চাপ শিথিল করেছে।
জুনের গমের বৈশ্বিক দাম আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোয় শস্যটির সংগ্রহ মৌসুম শুরু হওয়ায় দাম কমে যায়। রাশিয়ায় গমের পর্যাপ্ত সরবরাহ লক্ষ করা গেছে। সরবরাহ বাড়ায় ওই মাসে কমানো হয় শস্যটির রফতানি শুল্ক। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন পরিস্থিতির উন্নতিও দামের ওপর থেকে ঊর্ধ্বমুখী চাপ কমিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে গত মাসে চালের দাম ১ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। ভারতীয় চালের বাইরে অন্যান্য দেশে শস্যটির চাহিদা কমে যাওয়া এবং পাকিস্তানে রফতানি বাণিজ্যে আকর্ষণের উদ্যোগ দাম কমাতে সহায়তা করেছে। অন্যান্য শস্যের মধ্যে যব ও সরগামের দামও কমেছে লক্ষণীয় মাত্রায়।
এফএও মূল্যসূচক অনুযায়ী, গত মাসে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম আগের মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে দিয়ে দাম আড়াই বছরের সর্বনিম্নে। মূলত পাম অয়েল ও সূর্যমুখী তেলের দাম কমে যাওয়ায় নিম্নমুখী হয়ে উঠেছে ভোজ্যতেলের বাজার।
বিশ্বের শীর্ষ পাম অয়েলসমৃদ্ধ দেশগুলোয় গত মাসে উৎপাদন বেড়েছে। বিপরীতে পণ্যটির বৈশ্বিক আমদানি চাহিদা কমেছে। ফলে টানা দ্বিতীয় মাসের মতো পাম অয়েলের দাম কমল। পর্যাপ্ত রফতানিযোগ্য সরবরাহের সুবাদে কমেছে সূর্যমুখী তেলের দামও।
বিভিন্ন ভোজ্যতেলের মধ্যে গত মাসে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ অঞ্চলগুলোয় শুষ্ক আবহাওয়া দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রসদ জুগিয়েছে। অন্যদিকে কানাডা ও ইউরোপের দেশগুলোয় বৈরী আবহাওয়ায় সরিষা তেলের দামও বেড়েছে।
এফএওতে গত মাসে দুগ্ধপণ্যের দাম মে মাসের তুলনায় দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ২২ দশমিক ২ শতাংশ। রফতানিযোগ্য দুগ্ধপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ ও পনিরের ব্যাপক মূল্যহ্রাস এক্ষেত্রে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে।
এদিকে টানা চার মাস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর কমেছে চিনির দামও। বৈশ্বিক আমদানি চাহিদায় শ্লথগতি এবং ব্রাজিলে আখ সংগ্রহের অগ্রগতি দাম কমতে সহায়তা করে। তবে এল নিনোর প্রভাব ও ডলারের বিপরীতে ব্রাজিলের মুদ্রার বিনিময় মূল্যবৃদ্ধি পণ্যটির দামকে আবারো ঊর্ধ্বমুখী চাপে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দানাদার খাদ্যশস্যের সরবরাহ ও চাহিদা শীর্ষক ভিন্ন একটি প্রতিবেদনে এফএও জানায়, চলতি বছর বিশ্বজুড়ে ২৮১ কোটি ৯০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হতে পারে। ২০২২ সালের তুলনায় উৎপাদন ১ দশমিক ১ শতাংশ বাড়বে।
এনজে