বীমা খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে আইডিআরএ ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসান।
তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের বীমা খাতকে কার্যকর ও দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সহায়ক ও সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরী, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বীমার আওতা বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বীমা গ্রহাকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার মাধ্যমে সার্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করা।
শনিবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি ভবনে আয়োজিত জেনিথ ইসলাম লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অর্ধ-বার্ষিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বীমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ফরিদুন্নাহার লাইলী।
আইডিআরএ সদস্য কামরুল হাসান বলেন, বীমা খাতের উন্নয়ন ও প্রসারের লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের বীমা কোম্পানিতে যোগদানের তারিখকে স্মরণীয় করে রাখতে ১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে বীমা মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। বিভিন্ন আইন, বিধি-বিধান ও নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে শৃংখলার মধ্যে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কর্তৃপক্ষের কঠোর মনিটরিংয়ের ফলে পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে বীমা দাবি পরিশোধের পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্রুত ও নির্ভূল সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ইউনিফায়েড মেসেজিং প্লাটফরম- ইউএমপি চালু করা হয়েছে।
সম্মেলনে উপস্থিত বীমা কর্মীদের উদ্দেশ্যে কামরুল হাসান বলেন, আপনারা সকলেই জানেন জীবন বীমা একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা; যা সমাজের অর্থনৈতিক সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। এটি মানুষের জীবনের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য সম্পদ। আপনারা জনমানুষের পাশে থেকে তাদের ভবিষ্যত সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শ্রম দিয়ে থাকেন।
আপনাদের কাজের মাধ্যমে পরিকল্পনা করা হয় যেন মানুষের পরিবার সুরক্ষিত থাকে এবং তাদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। জীবন বীমা কর্মীরা পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বপূর্ণ কাজের কারণে তাদের যোগ্যতা দিয়ে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ কোম্পানিগুলোতে কাজ করছে। আপনাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ অত্যন্ত সৌভাগ্যের।
তিনি আরো বলেন, আপনারা এই অর্ধ বার্ষিক সম্মেলনে এসেছেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে আপনাদের প্রতিষ্ঠান তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে আপনাদের উপর ভরসা করেছেন এবং আপনাদের দ্বারা প্রদানকৃত সেবার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন এবং পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন। তাই আপনাদের সর্বদা উন্নত ও দ্রুত গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বদা সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে হবে।
আইডিআরএ সদস্য কামরুল হাসান বলেন, চতুর্থ প্রজন্মের জীবন বীমা কোম্পানি হিসেবে জেনিথ ইসলামী লাইফ নিয়মিত দাবি পরিশোধ করে আসছে। আমি জেনেছি আপনারা বিভিন্ন প্রকার বীমা দাবি বাবদ প্রায় ১৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন; যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ও আনন্দদায়ক। আপনাদের লাইফ ফান্ডও ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। তবে লাইফ ফান্ড আরো বৃদ্ধি করতে হবে। যাতে মেয়াদান্তে আকর্ষণীয় মুনাফাসহ গ্রাহকের টাকা ফেরৎ প্রদান করা যায়। এলক্ষ্যে আপনাদের নবায়ন আদায় হার ৭০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, আপামর জনসাধারণের জন্য বীমার কোন বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে উন্নয়নের মহীসোপানে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে সকলের জন্য তখন বীমা প্রয়োজনীয়তা অনুভব হচ্ছে।
ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কঠোর মনিটরিং এর ফলে গ্রাহক ভোগান্তি আগের চেয়ে বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। কোম্পানিগুলো এখন নিয়মিত দাবি পরিশোধ করছে। ফলে বীমার প্রতি গ্রাহক আস্থা আগের চেয়ে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ৩৫টি জীবন বীমা কোম্পানি কাজ করছে। এর মধ্যে যারা সর্বোত্তম সেবা দিতে পারবে তারাই এগিয়ে যাবে। সর্বদা গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে আমরা দ্রুত গ্রাহক সেবা নিশ্চিত এবং দ্রুত বীমা দাবি পরিশোধ করে ইতোমধ্যেই গ্রাহকের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছি।
বেকারত্ব বিমোচনে বীমার গুরুত্ব অপরিসীম উল্লেখ করে জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান বলেন, মানুষের কল্যাণের জন্য আমরা কাজ করছি। এতিম ও বিধবাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা কাজ করছি।
বীমা কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মিথ্যা কথা বলে বা প্রতারণা করে কোন বীমা পলিসি বিক্রি করবেন না। বীমা পলিসি চালাতে পারবে না বা নবায়ন আসবে না, এমন কাউকে বীমা পলিসি করাবেন না। মনে রাখবেন- একটি ভালো পলিসি আপনাকে নতুন আরেকটি পলিসি সংগ্রহে সহায়তা করবে।
এস এম নুরুজ্জামান বলেন, আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, আমরা জেনিথ ইসলামী লাইফ এ পর্যন্ত ১৮ কোটি ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৩১ টাকা বীমা দাবি পরিশোধ করেছি। বর্তমানে আমাদের হাতে কোন বীমা দাবি পেন্ডিং নেই। আমাদের কোম্পানির প্রায় ৩০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। বর্তমানে আমাদের লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
আমরা এখন পর্যন্ত ১৮০টি মৃত্যুদাবি বাবদ ৩ কোটি ৬ লাখ টাকা, ৩ হাজার ৫৪৫টি এসবি বাবদ ১৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, ৭৭৮টি স্বাস্থ্য বীমা বাবদ ৭১ লাখ ১২ হাজার টাকা, ম্যাচিউরিটির ২৭টি বীমা দাবি বাবদ ৫৮ লাখ টাকা এবং ১৪৪টি সারেন্ডারে ৩৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছি।এছাড়াও ৪১টি পলিসি লোন দেয়া হয়েছে, যার পরিমাণ ২১ লাখ টাকা।
জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী বলেন, আমাদের কোম্পানির ৯০ শতাংশ কার্যক্রম ইআরপি সল্যুশনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের কার্যক্রমের ৯৯ শতাংশ-ই পেপারলেস করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। বীমা আইনে ৯০ দিন থাকলেও আমরা ৭ কর্মদিবসের মধ্যে বীমা দাবি পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছি।
এম জি