২০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিমা দাবি নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত দেবে আইডিআরএ
সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-০৭-২৩ ১৬:৫০:০৮
এখন থেকে জীবনবিমার গ্রাহকদের ৫ লাখ টাকা ও সাধারণ বিমার (নন-লাইফ) গ্রাহকদের ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি পরিশোধ, তথা নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত দিতে পারবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) আইডিআরএ।
বিমা কোম্পানি দাবি পরিশোধ না করলে গ্রাহকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এত দিন শুনানি সাপেক্ষে জীবনবিমার গ্রাহকদের ২৫ হাজার টাকা ও সাধারণ বিমার (নন-লাইফ) গ্রাহকদের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি পরিশোধ, তথা নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত দিতে পারত আইডিআরএ। ‘স্বল্প অঙ্কের বিমা দাবির (পরিমাণ নির্ধারণ) বিধিমালা-২০১৮’ অনুযায়ী আইডিআরএ এ সিদ্ধান্ত দিত।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত মঙ্গলবার বৈঠক করে দাবির পরিমাণ বাড়িয়েছে। ফলে জীবনবিমার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা এবং সাধারণ বিমার জন্য ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। শিগগির বিষয়টি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হবে বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
বিমা কোম্পানি দাবি পরিশোধ না করলে আইডিআরএর কাছে অভিযোগ করার সময় মোট বিমা দাবির দশমিক ৫০ শতাংশ অর্থ সংস্থাটির তহবিলে জমা করতে হতো গ্রাহকদের। এ বাধ্যবাধকতা আগের মতোই থাকছে। টাকার অঙ্কে নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এখন অবশ্য আইডিআরএর আয় বাড়বে।
স্বল্প অঙ্কের জীবনবিমা ও নন-লাইফ বা সাধারণ বিমা দাবি-সংক্রান্ত বিরোধের বিষয়ে আইডিআরএ যে সিদ্ধান্ত দেয়, তার এখতিয়ার দেওয়া আছে বিদ্যমান ২০১০ সালের বিমা আইনে। বিমা আইনের ৭১ ধারায় বলা আছে, দাবির পরিমাণ সম্পর্কে কোনো বিরোধ দেখা দিলে দাবিদার ইচ্ছা করলে তা নিষ্পত্তি করার জন্য আইডিআরএর কাছে যেতে পারবেন।
আইনে আরও বলা আছে, আইডিআরএ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর বক্তব্য শুনে সাক্ষ্যপ্রমাণ নেওয়ার পর একক ‘সূক্ষ্ম’ বিচারে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারবে। এ বিষয়ে আইডিআরএর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। এভাবে সিদ্ধান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি উপযুক্ত কোনো আদালতের রায় বলে বিবেচিত হবে। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কোনো আদালতে আইডিআরএকে প্রশ্নের সম্মুখীন করা যাবে না।
বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ লাখ ও ২০ লাখ টাকার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হলে বিরোধ নিষ্পত্তিতে আইডিআরএর ক্ষমতা বেড়ে যাবে।
দেশের বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রথম সহসভাপতি ও মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ এবং ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে। পরিমাণটা ভালোই বেড়েছে। বিমাগ্রাহকদের স্বার্থে সরকারের এমন উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।
দেশে ৩৫টি বেসরকারি জীবনবিমা কোম্পানি আছে। এর মধ্যে বিদেশি জীবনবিমা কোম্পানি ২টি। রাষ্ট্রায়ত্ত জীবনবিমা করপোরেশন আছে ১টি। অন্যদিকে বেসরকারি সাধারণ বিমা (নন-লাইফ) কোম্পানি রয়েছে ৪৫টি। এর বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা করপোরেশন আছে ১টি।
বিআইএর তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২ সালে বিমা খাতে মোট প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ১৬ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জীবনবিমা খাতের প্রিমিয়াম আয় ১১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, আর সাধারণ বিমা খাতের প্রিমিয়াম ৫ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। জীবনবিমা ও সাধারণ বিমা কোম্পানির অর্জিত প্রিমিয়ামের বিপরীতে ২০২২ সালে ১ হাজার ৩০৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ভ্যাট ও কর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়েছে।
বিমা খাতের উন্নয়নে ‘বাংলাদেশের বিমা খাতের উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চলছে। প্রথমে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, আর বিশ্বব্যাংকের অর্থ ৫১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৬৩২ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৭২ কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত দুই করপোরেশনসহ বিমা খাতের মোট সম্পদের পরিমাণ ৬০ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৫ হাজার কোটি টাকা জীবনবিমা খাতের। বাকিটা সাধারণ বিমার।
এএ