রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধের মধ্যে লম্বা সময় ধরে আলোচনা, সমালোচনা ও গুঞ্জনের পর অবশেষে কৃষ্ণ সাগরীয় খাদ্যশস্য চুক্তি থেকে সরে এসেছে রাশিয়া। ফলে বিশ্বজুড়ে আবারো খাদ্যপণ্যের সরবরাহ সংকটের মুখে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে এশিয়ার দেশগুলো। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং এল নিনো আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে এরই মধ্যে দেশগুলোর কৃষি খাত উৎপাদন নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চুক্তি থেকে রাশিয়ার বের হয়ে আসার বিষয়টি খুব দ্রুত নয়, বরং ধীরে ধীরে বাজারে প্রভাব ফেলবে। খবর নিক্কেই এশিয়া।
রাশিয়া গত বছরের শুরুর দিকে ইউক্রেনে হামলা চালালে বন্ধ হয়ে পড়ে কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর দিয়ে শস্য রফতানি। রুশ সেনাদের অবরোধের মুখে ইউক্রেনের রফতানিকারকরা গমসহ সব ধরনের খাদ্যশস্য রফতানি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। ওই সময় দেশটি স্থল ও রেলপথ দিয়ে অল্প কিছু শস্য রফতানি করতে সক্ষম হয়।
টানা ছয় মাস রফতানি বন্ধ থাকায় বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের সরবরাহ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে খাদ্যপণ্যের দাম। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলো খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গত বছরের জুলাইয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এতে ফের কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর দিয়ে রফতানি চালু হয়। তবে এ বছর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জবাবে চুক্তিটি থেকে বের হয়ে আসার হুমকি দেয় রাশিয়া। অবশেষে সোমবার দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি থেকে বের হয়ে আসে।
ইউক্রেন বিশ্বের শীর্ষ গম, ভুট্টা ও সূর্যমুখী তেল রফতানিকারক দেশ। কৃষ্ণ সাগরীয় খাদ্যশস্য রফতানি চুক্তির অবসান ঘটায় দেশটির রফতানি কার্যক্রম আবারো ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সোমবার রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘চুক্তিটি স্থগিত হয়ে যাবে এবং রাশিয়া এটি সম্প্রসারণ করবে না।’
জাতিসংঘের কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের দেয়া তথ্যমতে, চুক্তিটির স্বাক্ষর হওয়ার প্রথম চার মাসে ইউক্রেন এটির আওতায় প্রায় ৬০ শতাংশ ভুট্টা, গম ও যব রফতানি করতে সক্ষম হয়। চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার এক বছরে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে ৩ কোটি ৩০ লাখ টন কৃষিপণ্য রফতানি হয়েছে। এ সুবাদে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম যুদ্ধ-পরবর্তী পর্যায়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ কমেছে।
এনজে