ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য মুসৌরি

::মোঃ আজিজুর রহমান প্রকাশ: ২০২৩-০৮-০৭ ১০:৫৬:৩১


সপ্তাহ খানেক হলো একটি প্রশিক্ষণে ভারতের উত্তরাখন্ড প্রদেশের মুসৌরি এলাকায় অবস্থান করছি। উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদুনে অবস্থিত ছোট্ট হিল স্টেশন এই মুসৌরি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত হওয়ায় প্রাকৃতিক বৈচিত্রের এক অভয়ারণ্য এই মুসৌরি। শহরটি কুইন অফ হিলস নামেও পরিচিত । ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ সরকার এই শহরটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে তোলে। পুরো মিসৌরি শহরটি বিশেষ করে সরকারি স্থাপনাসমূহ ব্রিটিশ ধাঁচের গাড় লাল বর্ণের হওয়ায় বর্ষায় এগুলো অপরূপ দেখায়।

১৮৩০ থেকে ১৮৪৩ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সার্ভেয়র জেনারেল অফ ইন্ডিয়া স্যার জর্জ এভারেস্ট সার্ভে করার জন্য যে বাড়িতে বসবাস করতেন সেই বাড়ি ও আশেপাশের কয়েকটি পাহাড় সর্বাধিক নৈসর্গিক মনে হয়েছে। এখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে পুরো মুসৌরি শহরকে দেখতে পাওয়া যায়। আর এর শীতল বাতাস এক স্বর্গীয় শিহরণ দিয়ে যায়। উল্লেখ্য এই স্যার জর্জ এভারেস্ট এর নাম অনুসারেই হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট এর নামকরণ করা হয় । বর্তমানে বাড়িটিকে ভারত সরকার জর্জ এভারেস্ট এর ব্যবহার্য সামগ্রী সমূহ দিয়ে একটি মিউজিয়ামে পরিণত করেছে। এখানে আসলে ব্রিটিশ উপনিবেশ ও ভিক্টোরিয়া টাইপ স্থাপত্যেরও ধারণা পাওয়া যাবে। এছাড়া শহরটি পাহাড়বেষ্টিত হওয়ায় পাহাড়ের ঢালে এবং আবাসিক ভবনের আশেপাশে সাদা বানরের বিচরণ চোখে পড়ার মতো।

মুসৌরির উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থানসমূহ—
IAS Central Training Institute, হোম অব জর্জ এভারেস্ট, কেম্পটি ফলস, ঝাড়িপানি ফলস, দালাই হিল, মল রোড, ক্রাইস্ট চার্চ, মুসৌরি লেক, লাল তিব্বা পাহাড় ছাড়াও অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। আসলে পুরো শহরটিই ছবির মতন গোছানো। রাতে মল রোডে আড্ডাছলে হাঁটা-হাঁটি ও চা খাওয়া মনে করিয়ে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাতের টিএসসিকে।
যেভাবে মুসৌরি আসলাম—

ঢাকা থেকে বিমানযোগে দিল্লী হয়ে আরেকটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে দেরাদুন বিমানবন্দর পৌঁছেছি। বিমানবন্দর থেকে গাড়িযোগে প্রায় ২ ঘণ্টার যাত্রাপথ মুসৌরি শহর। গুগল ম্যাপ অনুযায়ী দুরত্ব ৬১ কি.মি.।

ভ্রমণে ইচ্ছুকদের অবশ্যই যে সকল বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে—

**আবহাওয়া- এই বর্ষাকালে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের আশেপাশে হওয়ায় শীতের কাপড় আবশ্যক। পাহাড়ে উঠা বা ট্র্যাকিং এর ক্ষেত্রে অভ্যাস ও আত্মবিশ্বাস না থাকলে বড় রকমের দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

**খাদ্যাভ্যাস- ভিন্নধর্মী খাবার খাওয়ার অভ্যাস না থাকলে কিছুটা দেখেশুনে খেতে হবে। প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র সাথে নিয়ে আসতে হবে।
** উচ্চতাঃ পূর্বে উঁচু পাহাড়ি এলাকায় উঠার অভ্যাস না থাকলে মাথা ঘোরা ও বমি হওয়াটা স্বাভাবিক । বিশেষ করে পাহাড়ি বাঁকে মোড় নেয়ার সময় এটি বেশি হয়। এমতাবস্থায়, গাড়ি থামিয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।

মোঃ আজিজুর রহমান
(সিনিয়র সহকারি সচিব)
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)
কালীগঞ্জ, গাজীপুর।