জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নজরুল সন্ধ্যার আয়োজন করেছে হিল্লোল সাহিত্য পরিষদ। শনিবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর একটি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আলোচনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কবি, সাংবাদিক, নজরুল গবেষক, বীরমুক্তিযোদ্ধা কবি আব্দুল হাই শিকদার।
হিল্লোল সাহিত্য পরিষদের উপদেষ্টা দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি,সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক ও গবেষক ড. ফজলু হক তুহিন , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ , তরুণ সাহিত্যকর্মীদের জাতীয় সংগঠন বাংলা সাহিত্য অঙ্গনের আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম আকবর প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই কবি আব্দুল হাই সিকদার হিল্লোল সাহিত্য পরিষদ কে নজরুলকে নিয়ে সন্ধ্যার আয়োজন করায় ধন্যবাদ জানায়। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, নজরুল আমাদের জন্য অপরিহার্য আমরা নজরুলের কোন বিকল্প চিন্তা করতে পারিনা। পুরো জাতিকে সাহিত্যে একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়তে, পুরো জাতিকে একসাথে সংস্কৃতিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে, পুরো জাতিকে একসাথে জেগে ওঠার জন্য যা যা দরকার সব করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম কোন আইল্যান্ড না কাজী নজরুল ইসলাম ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের বাংলাদেশের পুরো ভূখণ্ড। বাংলাদেশের পুরো ভূখণ্ডের প্রত্যেকটা অনু , পরমাণুর কোনায় কোনায় কাজী নজরুলের নাম লেখা আছে কারন সমস্ত জাতিকে একসঙ্গে জাগ্রত করার ক্ষমতা একমাত্র কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন।
নজরুল কেন জাতীয় কবি এই প্রশ্ন রেখে কবি আব্দুল হাই সিকদার বলেন নজরুল বলেছেন আমি শুধু মুসলমানদের কবি না, আমি হিন্দুদের কবি, আমি খ্রিস্টানদেরও কবি আমি বৌদ্ধদেরও কবি ।
তিনি বলেন, একটা জাতি তাকেই জাতীয় কবি বলে যার মধ্যে সকল জনগোষ্ঠীর জন্য আতিথ্য থাকে। জাতির মধ্যে যত মানুষ আছে সবাইকে সমান ভাবে সাহিত্যের মধ্যে রেখে জাতিকে সমান জায়গায় দাঁড় করিয়ে সবাইকে নিয়ে সাহিত্য রচনা করেছেন বাংলা সাহিত্যের একমাত্র কাজী নজরুল ইসলাম । সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে নজরুল কবিতা লিখেছেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। এমন একটি দেশ চাই যদি যেখানে কোন মারামারি থাকবে না , হানাহানি থাকবে না হিংসা বিদ্বেষ থাকবে না তাহলে আমাদের নজরুলের কাছে ফিরে যেতে হবে।
নজরুল বলেছেন, 'গাহি সাম্যের গান - যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান - যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্লিম-ক্রীশ্চান।' মহৎ এই বাণী যিনি অবলীলায় দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, তিনিই কাজী নজরুল ইসলাম।
তিনি সবাইকে নজরুলের চেতনা লালন করতে বলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. ফজলু হক তুহিন বলেন, কবি নজরুল তিনি ভাব এবং ভাষার একটা বিপ্লব নিয়ে এসেছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে, সাহিত্যের-অঙ্গনে ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিপ্লব সাধন করেছে কাজী নজরুল ইসলাম। আগে কবিতা ছিল আকাশ বিহারি কিন্তু নজরুলের মাধ্যমে আমরা দেখলাম নির্যাতিত , নিষ্পেষিত , বঞ্চিত ও লাঞ্চিত মানুষ নজরুলের কবিতায় কণ্ঠস্বর হয়ে পড়ল। কবিতা আকাশ থেকে থেকে রাজপথে চলে আসলো জনগণের মধ্যে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসলো। নজরুল চর্চা মানে বাংলাদেশ কে চর্চা করা। আমাদের নজরুলের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে চর্চা করতে হবে।
প্রফেসর ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, নজরুল একটা জাতির কাছে সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক তুলে ধরেছেন। নজরুল মানুষের মনের সাহিত্যের আসল খোরাক যুগেছেন। বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে নজরুলের জাগরণ তৈরি করতে হবে।
এএ