শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে গমের ভবিষ্যৎ সরবরাহ মূল্য কমেছে। ডলারের শক্তিশালী বিনিময় মূল্য এবং বৈশ্বিক সরবরাহ দাম বাড়ার ক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। যদিও দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোয় উৎপাদন নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। ফলে যেকোনো সময় শস্যটির দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স।
শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে ডিসেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে শীতকালীন নরম লাল গমের দাম ১০ সেন্ট কমেছে। প্রতি বুশেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৬ ডলার ২১ সেন্টে। চলতি সপ্তাহের গমের সবচেয়ে সক্রিয় সরবরাহ চুক্তির দাম ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমেছে।
অন্যদিকে, কানসিসি সিটি বোর্ড অব ট্রেডে শীতকালীন শক্ত লাল গমের দাম ২ সেন্ট বেড়েছে। প্রতি বুশেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৭ ডলার ৬৪ সেন্ট। এমজিইএক্সে ডিসেম্বরে সরবরাহ চুক্তিতে বসন্তকালীন গমের দাম ২ সেন্ট বেড়ে বুশেলপ্রতি ৮ ডলার ২ সেন্টে উন্নীত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ আবারো সুদহার বৃদ্ধির কথা ভাবছে। এমন খবরে শুক্রবার ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যায়। এ কারণে অন্য মুদ্রার ক্রেতাদের কাছে গমের চাহিদা কমেছে।
চাহিদার দিক থেকে ২০২৩-২৪ মৌসুমে শীর্ষ রফতানিকারক দেশগুলো থেকে গমের বৈশ্বিক সরবরাহ রেকর্ড সর্বনিম্নে নামার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০০৭-০৮ মৌসুমের পর এবারই প্রথম সরবরাহ এতটা নিম্নমুখী হওয়ার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। ফলে দাম কমে যাওয়ার বিষয়টি বেশিদিন স্থায়ী হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্বজুড়ে গম উৎপাদন ও বাণিজ্য নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তা কাজ করছে। বিশেষ করে কৃষ্ণসাগরীয় ইস্যু এ অনিশ্চয়তায় সবচেয়ে বেশি জ্বালানি জোগাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বর্তমানে গমের বৈশ্বিক সরবরাহ কম। ফলে যে ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তা ব্যাপক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারকে।
মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) ২০২৩-২৪ বিপণন মৌসুমের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়, এ মৌসুমে শীর্ষ রফতানিকারক দেশগুলোয় গমের মজুদ ও ব্যবহারের অনুপাত ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ কমতে পারে। অর্থাৎ মৌসুমে যে পরিমাণ গমের মজুদ থাকবে তার চেয়ে ব্যবহারের হার থাকবে বেশি। মজুদ ও ব্যবহারের অনুপাত গত ১০ বছরের গড় ১৬ দশমিক ৮ শতাংশের চেয়ে অনেক নিচে নামবে। ২০০৭-০৮ মৌসুমে মজুদ ও ব্যবহারের অনুপাত ছিল ১৩ দশমিক ১ শতাংশ।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর খাদ্যশস্য বিশেষ করে গমের বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন তৈরি হয়। এর পর থেকেই অন্যতম শীর্ষ রফতানিকারক ইউক্রেনে উৎপাদন ও রফতানি সমানতালে কমছে।
গত বছর দেশটি প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা বেশি রফতানি করলেও এ বছর পরিস্থিতি আবারো নেতিবাচক দিকে মোড় নিয়েছে।
মার্কিন কৃষি বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ মৌসুমে ইউক্রেন ২ কোটি ৯ লাখ টন গম উৎপাদন করতে পারে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে যা কমে ১ কোটি ৬৫ লাখ টনে নামবে। অন্যদিকে, ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশটি ১ কোটি ৫০ লাখ টন রফতানি করবে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে যা এক কোটি টনে নামতে পারে। অর্থাৎ আগামী মৌসুমে দেশটির উৎপাদন ও রফতানি উভয়ই কমবে।
এনজে