চলতি বছরের অক্টোবর মাসের মধ্যেই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি প্রায় ৮০ শতাংশ। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে উদ্বোধনের তোড়জোড়। এক্সপ্রেসওয়েটিতে উঠা-নামার জন্য বিভিন্ন স্থানে ১৪টি র্যাম্প সংযোজনের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত একটিও নির্মাণ হয়নি। যে কারণে উদ্বোধনের পরও এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনে কতখানি ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন্ শামস্ বলেন, ‘আগামী নভেম্বরে দেশের একমাত্র টানেল উদ্বোধনের কথা রয়েছে। টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম নগরীতে যানবাহনের চাপ বাড়বে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে ওক্সপ্রেসওয়ে চালুর চিন্তা করছি। আমাদের চেষ্টা থাকবে ১৬ কিলোমিটার পুরো এক্সপ্রেসওয়ে চালু করা। যদি তা না পারা যায় টাইগারপাস্ পর্যন্ত উদ্বোধনের চিন্তা আছে।’
প্রধান প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘শুরুর দিকে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ২৪টি র্যাম্প থাকার কথা থাকলেও এখন হবে ১৪টি। এখনও র্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। উদ্বোধনের পর র্যাম্প নির্মাণে কাজ শুরু হবে। তবে এখন লালখান বাজার থেকে যেসব যানবাহন বিমানবন্দর পর্যন্ত যাতায়াত করবে শুধু সেগুলো উঠতে পারবে। মাঝখানে নামার সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। প্রকল্পের অধীনে ৩৯০টি পিলার, ৪০০টি গার্ডার থাকার কথা। এরমধ্যে ৩৮৯টি পিলার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একটি পিলারের কাজ বাকি আছে। ৩৮৯টি গার্ডার বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ চলমান আছে। প্রাথমিকভাবে নভেম্বরের আগেই উদ্বোধনের টার্গেট রাখা হয়েছে।’
এদিকে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার প্রস্তাব করেছে সিডিএ। গত ২৪ আগস্ট সিডিএ ভবনে আয়োজিত ৪৫৮তম বোর্ড সভায় এ প্রস্তাব করা হয়। সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সিডিএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এই দফায় সময় বেড়েছে এক বছর। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। একই সময়ে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা করা হয়। সিডিএ’র এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র্যাংকিন।
প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের, ৫৪ ফুট প্রশস্ত এবং চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১৪টি র্যাম্প। এরমধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি র্যাম্প থাকবে।
এনজে