বোধন শেষে আজ সোমবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। আগামী ২৩ অক্টোবর শুক্রবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই শারদীয় দুর্গোৎসব। সারাদেশে এখন উৎসবের আমেজ।
পুরাণমতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লঙ্কা যাত্রার আগে শ্রীরামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে; যা শারদীয় দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। দেবীর শরৎকালের পূজাকে অকালবোধনও বলা হয়।
সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে পৃথিবীতে আসবেন; এর ফল হচ্ছে ফসল ও শস্যহানি। আর বিদায় নেবেন পালকি চড়ে; যার ফল হচ্ছে মড়ক।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, এবার দেশে প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সরকারি হিসাবে ২৮ হাজার ৩৪৫টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীতে গতবারের চেয়ে ৫টি মণ্ডপ বাড়িয়ে ২২৫টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হচ্ছে।
শারদীয় দুর্গাপূজার প্রথম দিন আজ ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। গতকাল রোববার সায়ংকালে সব মণ্ডপ-মন্দিরে বেলশাখায় বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনা পূজা করা হয়েছে। ষষ্ঠী তিথিতে আজ সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ। সেইসঙ্গে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল দুর্গোৎসব। আগামীকাল মঙ্গলবার মহাসপ্তমী ও বুধবার মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা। তিথি অনুযায়ী এবার বৃহস্পতিবার একইদিন মহানবমী ও বিজয়া দশমী পড়েছে। তবে সারাদেশে শুক্রবার বিজয়া শোভাযাত্রাসহকারে প্রতিমা বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আবার বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকামতে, শুক্রবার সকালে বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জন হওয়ায় রামকৃষ্ণ মিশন পূজামণ্ডপসহ অনেক মন্দির ও পূজামণ্ডপ এ সময়সূচিই অনুসরণ করছে। এ হিসাবে বরাবরের মতো এবারও পাঁচ দিনজুড়েই চলবে উৎসবের নানা আয়োজন।
দুর্গোৎসব চলাকালে পূজার প্রতিদিনই অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ-আরতির আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া দেশজুড়ে দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রতিটি মণ্ডপে আলোকসজ্জা, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, নাটক, নৃত্যনাট্যসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রেখে জাতীয় উন্নয়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সব মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র্যাব ও বিডিআর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সংবাদ সম্মেলন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতারা বলেছেন, জাতীয় উৎসবে ঐক্য ও সমন্বয়ের ধারা প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি। শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করেই পূজা ও ধর্মীয় উৎসব নিরাপদ করা যাবে না; সমাজ এবং রাজনীতি থেকে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা নির্মূল করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
গতকাল রোববার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সেমিনার হলে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি কাজল দেবনাথ, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দে, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাংবাদিক স্বপন সাহা, মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জে.এল. ভৌমিক প্রমুখ।