ক্রিকেটের ইতিহাসে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ম্যাচটিতে ব্যাটসম্যান ইশ সোধিকে মানকাডিংয়ের ফাঁদে ফেলেও উইকেট ফিরিয়ে দেয় লাল-সবুজের দল। আর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময়ে বল হাতে ত্রাসের নাম হয়ে ওঠেন সেই সোধি। একে একে তুলে নেন ৬ উইকেট।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নামে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। ম্যাচটিতে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড। দলটি ৪৯.২ ওভারে সবগুলো উইকেট হারিয়ে ২৫৪ রান করে। জবাবে ৪১.১ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান করে বাংলাদেশ। তাতে কিউইরা ৮৬ রানের জয় পায়।
২৫৫ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। আম্পায়ার ইরাসমাস লিটনকে আউট দেন। তবে রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদ থেকে বেঁচে যান লিটন। যদিও সেটিকে বেশিদূর নিতে পারেননি তিনি।
ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে কাইল জেমিসনের শিকার হয়ে ফিরেন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। ওভারটিতে প্রথম তিন বলে রান বের করতে পারেননি লিটন। চতুর্থ বলে এক রান নেন মিডউইকেটে ঠেলে। পরের বলে তামিম এক রান নিলে ষষ্ঠ বলে স্ট্রাইকে ফিরেই হন আউট লিটন। অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল কাট করতে গেলে থার্ডম্যানে সহজ ক্যাচ পেয়ে যান রাচিন রবীন্দ্র। লিটনের ইনিংস থামে ১৬ বলে ৬ রানে।
লিটন ফেরার পরে বাংলাদেশের পক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিং চালিয়ে যান ওপেনার তামিম ইকবাল ও তানজিদ হাসান তামিম। দুই তামিম মিলে ঝোড়ো রান সংগ্রহ করতে থাকেন। তাতে ১০ ওভার শেষে ১ উইকেটের বিনিময়ে ৫৪ রান তুলে ফেলে টাইগার বাহিনী।
তবে ১১তম ওভারে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বোলার ইশ সোধি ওই এক ওভারেই তুলে নেন তানজিদ তামিম ও সৌম্য সরকারের উইকেট। তাতে শুরুর ধাক্কা কাটতে না কাটতেই চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ১২ বলে ১৬ রান করে বিদায় নিয়েছেন জুনিয়র তামিম। আর রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন সৌম্য।
এরপরে দলীয় স্কোরে ১০ রান যোগ হতেই সোধির শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন তাওহীদ হৃদয়। তিনি করেছেন ৭ বলে মাত্র ৪ রান। ১৮.৫ ওভারে সোধির শিকারে পরিণত হন তামিম। ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ নিজের কাঁধে। তার সঙ্গে যোগ দেন শেখ মেহেদী। ১৩৪ রানে মেহেদী আউট হলে বাংলাদেশের জেতার আশা ক্ষীণ হয়ে আসে।
এ দিকে তখনও উইকেটে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ফলে ভরসা রেখেছিলেন ভক্তরা। তবে দলীয় ১৪৯ রানে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান আউট হলে ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায় কিউইদের হাতে। ম্যাচটিতে সোধির ষষ্ঠ শিকার হয়ে পরিণত হন হাসান মাহমুদ। তিনি ফিরেছেন শূন্য রানেই। এরপরে নাসুম আহমেদ কিছুটা হাত খোলার চেষ্টা করলেও বাংলাদেশের শেষ রক্ষা হয়নি। ১৬৮ রানেই গুটিয়ে যায় টাইগারদের ইনিংস।
ম্যাচটিতে বল হাতে বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন খালেদ আহমেদ ও মেহেদী হাসান। এছাড়া ২ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন হাসান মাহমুদ ও নাসুম আহমেদ।
কিউই শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। ফিজের শিকারে পরিণত হয়ে শূন্য রানে মাঠ ছাড়েন উইল ইয়ং। সফরকারী দলের পরের উইকেটটিও নেন ফিজ। এবার ফিন অ্যালেনকে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানান তিনি। অ্যালেন ১৫ বলে করেন ১২ রান।
মাঝে হাসান মাহমুদ একটি ওভার ডট দেন। এরপর বোলিংয়ে এসেই শিকার ধরেন অভিষিক্ত খালেদ আহমেদ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজির প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে চাদ বোয়েসকে তুলে নেন তিনি। ১৯ বলে বোয়েস করেন ১৪ রান। ফলে পাওয়ার-প্লেতে ভীষণ চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড।
পাওয়ার-প্লের চাপ সামলে হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেলের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড। দুজন ছিলেন শত রানের জুটি গড়ার দ্বারপ্রান্তে। এমন সময় আঘাত হানেন খালেদ আহমেদ। তার শিকারে পরিণত হয়ে মাঠ ছাড়েন হেনরি নিকোলস। অর্ধশতক থেকে এক রান দূরে থাকতে নিকোলসকে সাজঘরে পাঠান খালেদ। ব্লান্ডেলের সঙ্গে নিকোলসের জুটি হয় ৯৫ রানের। ৬১ বলে ৪৯ রান করেন কিউই তারকা।
নিকোলস আউট হওয়ার আগেই হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন ব্লান্ডেল। ৫৪ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন তিনি। এরপর শেখ মেহেদীর ওভারে বিদায় নেন রাচিন রবীন্দ্র। ১৪ বলে ১০ রান করেন কিউই অলরাউন্ডার। টাইগারদের জন্য বিপদজনক হয়ে ওঠা ব্লান্ডেলের স্টাম্প উপড়ে দেন হাসান মাহমুদ। ব্লান্ডেল ৬৬ বলে করেন ৬৮ রান।
৩৮.১ ওভারে কোল ম্যাককঞ্চিকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন নাসুম। ৩৩ বলে ২০ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। এরপরে দলীয় ২১৯ রানে কাইল জেমিসনকে ফেরান শেখ মেহেদী। তবে ইশ সোধি ও অধিনায়ক লকি ফার্গুসন মিলে শেষদিকে দ্রুত রান তুলে সংগ্রহ বাড়িয়ে ২৫৪ করেন।
এএ