পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি তাদের জন্মভূমির বিরুদ্ধে তথ্য ও পরিসংখ্যানসহ ভুল তথ্য ও অপপ্রচার প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার নিউইয়র্কের কুইন্সে সেন্টার ফর নন রেসিডেন্স বাংলাদেশীদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা এবং অনিবাসী বাংলাদেশীদের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে বিশ্বের সাথে সংযুক্ত করতে প্রবাসী বাংলাদেশী ও এই প্রবাসী সম্প্রদায়ের ভূমিকার প্রশংসা করেন। এ সময় তিনি তাদের নিজ দেশের অর্জনগুলো তুলে ধরার আহ্বান জানান। ড. মোমেন বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও অভিন্ন মূল্যবোধ-উভয় ক্ষেত্রেই সুদৃঢ় সম্পর্কের ওপর জোর দেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসীদের বাংলাদেশের সাথে সংযুক্ত থাকতে এবং উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে অবদান রাখতে অনুপ্রাণিত করেন।
ড. মোমেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ অবদানকারী হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকা তুলে ধরে শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকারের ওপর জোর দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১২ মিলিয়ন বাংলাদেশী প্রবাসীর অমূল্য অবদানের স্বীকৃতি দেন- যারা রেমিট্যান্স ও বিভিন্ন খাতে অবদানের মাধ্যমে তাদের স্বদেশকে সহায়তা করে আসছেন।
এ সময় ড. মোমেন ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়- যখন জাতি নিপীড়ন, অবিচার এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ত্রিশ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে যে ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা দেখিয়েছে-তা তুলে ধরেন। এই সংগ্রামকে তিনি বাঙালি জাতির সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ একটি প্রাণবন্ত অর্থনীতিতে বিকশিত হয়েছে- যা রপ্তানি ও জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির সাক্ষী। এটি এখন বিশ্বব্যাপী ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে দাঁড়িয়েছে, উল্লেখযোগ্যভাবে দারিদ্র্য হ্রাস করেছে এবং বিভিন্ন সামাজিক সূচকে উন্নতি করেছে। ড. মোমেন বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সময়কালে বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে বাংলাদেশকে উগ্রবাদ, জিহাদি এবং সন্ত্রাসের দেশে পরিণত করা হয়েছিল। সুখবর হল সেই দিন এখন শেষ হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারাবিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বৃদ্ধিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আরো বেশি সম্পৃক্ত হতে হবে। ড. মোমেন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, শেখ হাসিনার কারণেই বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে ঈর্ষনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি উদীয়মান অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। দারিদ্র্য হ্রাসসহ আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ ঈর্ষনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সালে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ, আর বর্তমানে আমাদের জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি সারাবিশ্বের কাছে সাহস, আত্মমর্যাদা ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে তিনি স্বাধীনতার পর দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ থেকে আজকের বাংলাদেশে রূপান্তরের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলেন, সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশকে পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা তখন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার পর, সামরিক শাসন, কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন প্রণয়ন করে খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। তখন খুনিদের বিচার না করে বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করে পুরস্কৃত করা হয় বলেও জানান।
এসময় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপারসন এম এস শেকিল চৌধুরী, ইউ এস এম্বাসেডর অব পিস, ইউ এন এন্ড এক্সপার্ট ডব্লিউএইচও ড. সিমা কারেতনয়া নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা উপস্থিত ছিলেন।
এএ