কোমর বা ঘাড় ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করলে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে অপারেশন করতে হবে বলে ভয়ের মাত্রাটা বেশি হয়ে থাকে। তবে কোমর বা ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তি লাভ করতে যে অপারেশন করতেই হবে তা নয়। এখন বিনা অপারেশনেও এ ধরনের গুরুতর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
উন্নত বিশ্বের কিছু কিছু দেশে এ ধরনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে অপারেশনের পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়ে থাকে। যা ‘মিনিম্যালি ইনভেসিভ ইন্টারভেশন’ নামে পরিচিত। এ পদ্ধতিতে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে কোমর বা ঘাড়ের তীব্র অথবা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা-বেদনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভবপর। এই অত্যাধুনিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে এখন আর দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশেই এখন এই চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায়। যা অত্যন্ত উন্নতমানের ও আন্তর্জাতিক মানের। এখন দেশেই দক্ষতার সঙ্গে মিনিম্যালি ইনভেসিভ ইন্টারভেশন পদ্ধতিতে কোমর বা ঘাড় ব্যথার রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে।
‘মিনিম্যালি ইনভেসিভ ইন্টারভেশন’ এমন একটি পদ্ধতি যা অপারেশন থিয়েটারে জীবাণুমুক্ত উপায়ে না কেটে অজ্ঞান না করে বৈজ্ঞানিক উপায়ে রোগের মূলে (Origin of pain) প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে যার ঘাড় থেকে হাতে অথবা কোমর থেকে পায়ে ঝিনঝিন, ব্যথা অথবা অবস ভাব দেখা দেয় তার সবই একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় দ্রুত কমে যায়। যা পরবর্তী সময়ে পুনর্বাসন চিকিৎসার মাধ্যমে শেষ করা হয়। সব সময় যে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে ঠিক তা নয়। আমাদের শরীরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ঘাড় ও কোমরে ব্যথা সাধারণত তিনটি কারণে হয়ে থাকে।
১. মেকানিক্যাল বা নড়াচড়াজনিত কারণে।
২. ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহজনিত কারণে এবং
৩. মেকানিক্যাল ও ইনফ্ল্যামেটরি উভয় কারণে।
মেকানিক্যাল কারণে আবার কয়েক ধরনের ব্যথা হয়ে থাকে।
১. ঘাড়ের ফ্যাসেট জয়েন্টে ব্যথা হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যথা সাধারণত একদিকে হয় এবং ঘাড় থেকে হাতে যায় না। সাধারণ বিশ্রামে কমে যায় কিন্তু পরিশ্রমে আবার বেড়ে যায়।
২. ডিসকপ্রলাপ্সজনিত কারণে ব্যথা হয়ে থাকে। সাধারণত ঘাড়ে তীব্র ব্যথার সঙ্গে হাতে ঝিনঝিন বা ব্যথা নিয়ে আসতে পারে। ডিক্স সরে গেলে নার্ভের গোড়ায় চাপ পড়ে ফলে ব্যথা হাতে ছড়িয়ে যায়।
৩. হাড় সরে গেলে ব্যথা হয়। এর কারণে ফ্যাসেট জয়েন্টে ব্যথা ডিসকপ্রলাপ্সজনিত ব্যথা উভয়ই হতে পারে।
ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহজনিত কারণে ব্যথা সাধারণত কোমরের নিচের দিক থেকে শুরু হয়। এদের মধ্যে কোমরের এসআই (SI) জয়েন্ট অন্যতম। এই রোগে ঘাড়ে সাধারণত দুই দিকে ব্যথা হয়। তবে ব্যথা হাতে যায় না।
কেমর বা ঘাড়ের এ ধরনের ব্যথায় রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ রোগ নির্ণয় করতে অসুবিধা হলে চিকিৎসার ত্রুটি হতে পারে। এ ধরনের ব্যথা-বেদনায় রোগীদের রক্তের কিছু পরীক্ষা, এক্স-রে (x-ray) বোনমোরো ডেনসেটোমোট্রি (ইগউ) মাস্কুলে স্কেলেটাল আলট্রাসনোগ্রাম প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসা ঃ
সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের পর রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে তীব্র ব্যথার জন্য রোগীকে বিশ্রাম বা হাসপাতালে ভর্তি দেয়া হয়। ব্যথার ওষুধ সাপোজিটরি বা ইনজেকশনের মাধ্যমে দেয়া হয়। মাসল রিলাকজেন্ট ও ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়। তারপরও ব্যথা না কমলে মিনিম্যালি ইনভেসিভ ইন্টারভেনশন (Minimally Invasive Intervention) করা যেতে পারে। দীর্ঘদিনের ব্যথার ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি ব্যায়াম, ফিজিও থেরাপি প্রয়োজনে মিনিম্যালি ইনভেসিভ ইন্টারভেশন করা হয়।
এ ধরনের রোগের চিকিৎসায় ব্যথা কমে যাওয়ার পর ফিটনেস প্রোগ্রাম দেয়া হয়। ফিটনেস প্রোগ্রামের মাধ্যমে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় এ ব্যথা পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যায়।
সানবিডি/ঢাকা/আহো