বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘মিটিং করতে গেলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিলে খবর আছে। পালাবার পথ পাবেন না। পালিয়ে যেতে হবে।’
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে কৃষক লীগের ‘কৃষক সমাবেশে’ বিএনপির উদ্দেশে এ প্রশ্ন করেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আবেদনের বিষয়ে ‘সরকারের বৈধতার’ বিষয়টি সামনে এনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা বলে (কর্মসূচি পালনে সরকারের কাছে) আর অনুমতি নেবে না। অবৈধ সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নেবে না। তাহলে অবৈধ সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদন কেন? এ সরকার যদি অবৈধ হয়, এখানে কেন আবেদন?
তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে জিজ্ঞেস করতে চাই— ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম কই? আলটিমেটাম ভুয়া, এক দফা ভুয়া, বিএনপি হচ্ছে ভুয়া। ৩২ দল ভুয়া, আন্দোলন ভুয়া, ক্ষমতা দখল ভুয়া, ভুয়া দল।’
বিএনপি নেতারা শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেদিন আর বেশি দূরে নয়, বিএনপির রাজনীতি কবরস্থানে যাবে। কবরস্থানে যাওয়ার সময় এসেছে।’
রাজপথ দখল করার অধিকার বিএনপির নেই বলে দাবি করেন তিনি বলেন, ‘যারা রাস্তা দখল করবে, তাদের খবর আছে। আগুন নিয়ে আসলে আমরা হাত পুড়িয়ে দেবো। যারা ভাঙচুর করতে আসবে, তাদের হাত আমরা ভেঙে গুড়িয়ে দেবো।’
বিএনপির হাতে দেশ ও দেশের গণতন্ত্রণ নিরাপদ নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তাদের কাছে জনগণের স্বচ্ছ ভোট নিরাপদ নয়। বাংলাদেশের নিরাপত্তা, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার আদর্শ নিরাপদ নয়। এরা একাত্তরের বাংলাদেশ চায় না, চায় খুন আর সন্ত্রাসের বাংলাদেশ। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ছাড়া ক্ষমতার মঞ্চে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। আপনাদের নিরাপত্তা নিরাপদ নয়। ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা নিরাপদ নয়। শেখ হাসিনা আছেন বলেই বাংলাদেশ অনেক শান্তিতে আছে। একজন সৎ মানুষ রাজনীতিতে আছেন। ভালো মানুষ চোরচোট্টার দল বিএনপিতে নেই।’
বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের আলো নিভে যাবে দাবি করে কাদের বলেন, ‘শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছেন। এ বাংলাদেশকে আমরা আর কোনও কালো হাতে ছেড়ে দেবো না, অন্ধকারে ফিরে যেতে দেবো না।’
নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জোরদার খেলা হবে। সামনে নভেম্বর, তারপরে ডিসেম্বর, তারপরে জানুয়ারি, ফাইনাল খেলা, খেলা হবে। কৃষক ভাইয়ের খেলা হবে। প্রস্তুত হয়ে যান। নেত্রী আসছেন তিনি ডাক দেবেন। তিনি যখন ডাক দেবেন, রাস্তায় নেমে আসবেন।’
সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আজকে সারা দেশে কৃষকরা যখন সুখে আছে, তখন বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে দেশকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দিতে চায়। কৃষক লীগকে এ ব্যাপারে পাহারা দিতে হবে। কৃষক ভাইয়েরা যদি পাহারা দেয়, তাদের সঙ্গে যদি অন্যান্য পেশাজীবী থাকে, বিএনপির অরাজকতা করার সাধ্য হবে না।’
চালের দাম এই মুহূর্তে নিম্মমুখী দাবি করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দুই-তিন বছরের চেয়ে অনেক কম। কিছু পণ্যের দাম একটু বেশি, পেঁয়াজ-আলু। এটা উৎপাদনের জন্য। নানা কারণে উৎপাদন কম হয়েছিল। গত বছর পেঁয়াজ ফেলে দিতে হয়েছে। আলু বিক্রি করতে পারেনি। কৃষক এবার আলু কম (চাষ) করেছে। আমি জানি, রিকশা-ভ্যানচালক, নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি, এগুলোর দাম কমানোর জন্য।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘আপনারা খুনির দল, আপনার সন্ত্রাসীর দল। তাহলে কোন কারণে আপনারা ক্ষমতায় যেতে চান। কথা বলার আগে নিজের চেহারা আয়নায় দেখুন। এই অবৈধ দলের নেতা কীভাবে সরকারকে অবৈধ বলছে? দেশের মানুষ আর কখনও আপনাদের দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই আপনাদের রাস্তায় আস্ফালন করে লাভ নেই। আর যদি নির্বাচনে বাধা দেন, তাহলে রাজপথে প্রতিহত করবো।’
দলটির আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আগামী নির্বাচন যথাসময়ে এ সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে। কেউ আমাদের নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। আমরা আর কাউকে দেশের কোনও ক্ষতি করতে দেবো না।’
কৃষকলীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন— আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি প্রমুখ।
এএ