বৈশ্বিক বাজারে কমেছে ভারতীয় চালের রফতানি। গত সেপ্টেম্বরে খাদ্যশস্যটির রফতানির পরিমাণ ২০২২ সালের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৯০ শতাংশ কমেছে। চাল রফতানিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপের প্রভাব পড়েছে দেশটির চালের বাজারে। আমদানিকারকরা ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডমুখী হওয়ায় ক্রেতা হারাচ্ছে দেশটি। খবর দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন।
নয়াদিল্লিভিত্তিক চাল রফতানিকারক রাজেশ পাহাড়িয়া জৈন বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরে মাত্র ১০ শতাংশ রফতানি হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৯০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে।’ আরেক ব্যবসায়ী ও বাল্ক লজিকসের পরিচালক ভিআর বিদ্যা সাগর বলেন, ‘অন্যান্য সময়ের চেয়ে আধা সেদ্ধ চাল রফতানির পরিমাণও ১০ শতাংশ কমেছে।’
গত ২০ জুলাই সরকার সাদা চাল রফতানি নিষিদ্ধ করে ভারত। পরবর্তী সময়ে ২৬ আগস্ট নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে রফতানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেশটির খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একই সময় বাসমতী চাল রফতানির সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেয়া হয়। প্রতি টন বাসমতীর ন্যূনতম রফতানি মূল্য (এমইপি) নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ২০০ ডলার। উচ্চমূল্যের কারণে বিক্রি কমে আসে। পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি সপ্তাহের শুরুতে খাদ্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এমইপি ৮৫০ ডলারে নামিয়ে আনার কথা বলেন। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ দাম কার্যকর করা হয়নি।
পর্যাপ্ত আবাদ হলেও বৈরী আবহাওয়ায় ফলন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে নয়াদিল্লি। এছাড়া চলতি বছর আকস্মিক বন্যায় ধান চাষ ব্যাহত হয় বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশটিতে। এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাল সরবরাহ ঘাটতির আশঙ্কায় রফতানি নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত।
বিধিনিষেধের আগে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল-জুলাইয়ে চাল রফতানি বেড়েছিল ভারতের। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রফতানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এপিইডিএ) তথ্যমতে, গত বছরের এপ্রিল-জুলাইয়ে বাসমতী ব্যতীত অন্যান্য চাল রফতানির পরিমাণ ছিল ৫৩ লাখ ৬০ হাজার টন। চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৫৮ লাখ ১০ হাজার টনে।
ভারতীয় চাল রফতানিকারক সাগর বলেন, ‘আধা সেদ্ধ ভারতীয় চালের মূল্য ছিল শুল্কসহ টনপ্রতি ৫০০ ডলার। আফ্রিকান বন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে এর খরচ বেড়ে দাঁড়াত ৫৫০ ডলারে। আফ্রিকান আমদানিকারকরা তখন ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে আরো উন্নতমানের চাল কেনার কথা ভাবতে শুরু করে।’
থাই রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ২৫ শতাংশ ভাঙা সাদা চাল বাদে অন্যান্য জাতের দাম টনপ্রতি ৬০০ ডলারের বেশি। কয়েক সপ্তাহ ধরে মূল্য কিছুটা কমেছে। বিশেষ করে ডলারের বিপরীতে থাই মুদ্রা বাথের মূল্য কমায় আমদানিকারকরা সুবিধা পাচ্ছেন।
থাইল্যান্ডে শতভাগ বাছাই করা আধা সেদ্ধ চালের বর্তমান মূল্য টনপ্রতি ৬১০ ডলার। একই ধরনের চাল পাকিস্তানে বিক্রি হচ্ছে টনপ্রতি ৫৭৩-৭৭ ডলারে।
ভারতে মূল্য সুবিধা থাকা সত্ত্বেও রফতানি নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক জটিলতায় ক্রেতারা চালের বিকল্প বাজারমুখী হয়েছেন। চাল কিনতে আসা জাহাজগুলো সাধারণত ৪০-৪৫ দিন আগে যাত্রা করে। ফলে আগস্টে নন-বাসমতী চালে রফতানি নিষেধাজ্ঞা থাকায় ক্রেতারা ভারতে জাহাজ পাঠানো সীমিত করে দেন। এর প্রভাবে চলতি মাসে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলেও প্রত্যাশিত ক্রেতা পাচ্ছেন না রফতানিকারকরা। এতে লোকসানের মুখে পড়ছেন চাল ব্যবসায়ীরা।
এনজে