আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণসহ ৭ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে ৭ দফা ঘোষণা করেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, আপনারা অবগত আছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশ ও জাতি একটি চরম সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। নেই মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, নেই সম্পদের নিরাপত্তা, নেই মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা। সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে রাজনৈতিক অধিকারকে করে ফেলা হয়েছে সংকুচিত। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করে দেশে কায়েম করেছে ফ্যাসিবাদ। সেই সাথে ভোটারবিহীন সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সুবিধাভোগী নিয়ন্ত্রণহীন সিন্ডিকেট কর্তৃক সৃষ্ট দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত দুর্বিষহ করে তুলেছে। এ পরিস্থিতিতে গণমানুষের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট জনগোষ্ঠীর ওপর ক্ষমতাসীনরা একের পর এক জুলুম নির্যাতনের খড়্গ চাপিয়ে যাচ্ছে। মিডিয়ার ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উন্নয়নের ফাঁপা বুলি প্রচার করছে। যারাই অধিকার আদায়ের পক্ষে কথা বলছে, সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাটের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে, তাদের হামলা-মামলা দিয়ে কারাগারে অন্তরীণ করেছে। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার ছক কষছে।
আওয়ামী লীগ কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল ও নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণের মাধ্যমে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার কূটকৌশল গ্রহণ করছে উল্লেখ্য করে শিবির সভাপতি বলেন, ২০১৪ সালের ভোটারশূন্য নির্বাচন ও ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনসহ সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলেছে। দেশের শাসন ও বিচার বিভাগকে চরম দলীয়করণ করে নিজেদের ক্ষমতাকে স্থায়ী করার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সমূলে ধ্বংস করেছে।
ছাত্রলীগকে পেটোয়া বাহিনী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ব্যবহার করে বিরোধী ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ছাত্রসমাজকে সুষ্ঠু রাজনৈতিক গতিধারা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছে। যেখানে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ বিগত ১৫ বছরে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ছাড়া অর্ধশতাধিক ধর্ষণ ও যৌননিপীড়ন, দেড় শতাধিক টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও ছিনতাই, দেড় শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও সাংবাদিক লাঞ্ছনা ও প্রায় অর্ধশত ভর্তি জালিয়াতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে তারা।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন বর্তমানে গণদাবিতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করেছে শিবির সভাপতি।
৭ দফা দাবিসমূহ হলো-
১. ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
২. আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রফিকুল ইসলাম খান, সেলিম উদ্দীন, মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমানসহ সব আলেম ওলামা, ছাত্রনেতা ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। সেই সাথে তাদের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারা দেশের অফিসগুলো খোলার সুযোগ করে দিতে হবে। সেই সাথে ছাত্রসংগঠন হিসেবে সব রাজনৈতিক ও ছাত্রবান্ধব কর্মসূচি নির্বিঘ্নে পালনের সুযোগ দিতে হবে।
৪. দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে সব ছাত্র সংগঠনের সহঅবস্থান নিশ্চিত করা ও ছাত্রসংসদ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতির সুস্থ ধারা চালু রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত সব শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসগুলোকে নিরাপদ করতে হবে।
৫. প্রস্তাবিত ২০২০ শিক্ষানীতি বাতিল করে নৈতিকতাসমৃদ্ধ, কারিগরি ও বাস্তবমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে সব পর্যায়ে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক থাকবে। সেই সাথে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে সংস্কার ও উন্নত করে আরো যুগোপযোগী করতে হবে। ৬. সকল পর্যায়ে অর্থাৎ প্রাথমিক থেকে স্নাতক পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শিশুদের অবৈতনিক শিক্ষা দান নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে কাগজ-কলমসহ সব প্রকার শিক্ষা উপকরণের মূল্য হ্রাস করতে হবে।
৭. দেশের মোট বাজেটের ২৫ ভাগ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দিতে হবে এবং শিক্ষা বাজেটের এক-চতুর্থাংশ গবেষণায় ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি ভ্যাট হ্রাস করতে হবে।
এএ