এক বছরে পুঁজিবাজারের কী উন্নতি হয়েছে তা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিএসইসির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল।
বৈঠক শেষে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সানবিডিকে বলেন, একবছর আগে এই প্রতিনিধি দল আমাদের সাথে বৈঠক করেছিলো, সেই বৈঠকের পর থেকে আমাদের কী উন্নতি হয়েছে তারা জানতে চেয়েছে। আমরা আমাদের উন্নতির বিষয়ে তাদেরকে বলেছি।
তিনি বলেন, কিছু বিষয়ে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। বিশেষ করে একটি বড় ফান্ড সাপোর্টও চাওয়া হয়েছে। বলেছি এই সহযোগিতা পেলে আমাদের আগামীর কাজগুলো করতে অনেক সহজ হবে।
বিএসইসি সূত্র জানায়, চারটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে আজ বিএসইসির সাথে বৈঠক করেছে আইএমএফ । বিষয়গুলো হলো- বর্তমান মার্কেটের অবস্থা, নতুন আইন-কানুন, গ্রীন বন্ড ও সর্বজনীন পেনশন স্কিম।
বৈঠকের বিষয়ে বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সানবিডিকে বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিসহ চারটি ইস্যুতে আইএমএফ প্রতিনিধি দল আমাদের সাথে বৈঠক করেছে। বিএসইসির চেয়ারম্যান আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে তাদেরকে ব্রিফ করেছে। কিছু ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন, তারা আশ্বাস দিয়েছেন। সব মিলিলে খুব সুন্দর বৈঠক হয়েছে।
রেজাউল করিম বলেন, বর্তমান বাজারের বিষয়ে বলা হয়েছে, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ, সামনে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। নির্বাচনের পরে বাজারের অবস্থা ভালো হবে।
নতুন আইনের বিষয়ে বলা হয়েছে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কমোডিটি ও ডেরিভেটিভ চালু হবে। আইনটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অন্যদিকে এটিবিতে প্রাইভেট-প্লেসমেন্টের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধির সযোগ রাখা হয়েছে।
গ্রীন বন্ডের বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিভিন্ন ধরণের বন্ড চালু হবে। তার মধ্যে রয়েছে গ্রীন বন্ড নারীদের জন্য অরেন্জ বন্ড।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিষয়ে বলা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। পুঁজিবাজারের বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে সর্বজনীন পেনশন স্কিম অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।
এমন একটি সময় আইএমএফ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থার সাথে বৈঠক করছে, যেসময়ে দেশে ডলার সংকট চলছে। সংকট দূর হওয়ার পরিবর্তে বরং বাড়ছে। ডলার সংকটকালের এ সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির বিষয়টি আলোচনার শীর্ষে। ঋণ পেতে চাইছে দেশ, অন্যদিকে ঋণ পেতে নানা শর্তও জুড়ে দিয়েছে আইএমএফ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঋণের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া শর্ত খতিয়ে দেখতে পরামর্শদাতা সংস্থাটির বিশেষ দল গত ৪ অক্টোবর ঢাকায় আসে। এই সময়ে তারা অংশীজনদের সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠক করবে। আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো- আর্থিক খাতের স্থায়িত্ব, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, ব্যাংক খাতের সংস্কার, তারল্য ব্যবস্থাপনা, ডলারের বাজারভিত্তিক রেটে লেনদেন, ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি, সুদের হার ও মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন, টেকসই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, বন্ড মার্কেট, ডলার পরিস্থিতের অগ্রগতি। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সাথে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করবে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি। বর্ধিত তহবিল সহায়তা থেকে পাওয়া যাবে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৩৩০ কোটি ডলার এবং রেজিলিয়্যান্স অ্যান্ড সানসেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির আওতায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১৪০ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হওয়ার পরে মোট ৪২ মাসে ৭ কিস্তিতে এ ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ঋণের গড় সুদ হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ। আর গত বছরের ২৪ জুলাই আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ।
বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে সকল কমিশনার ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এএ