রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধের মধ্যে উচ্চ লজিস্টিক ব্যয়ের পাশাপাশি জ্বালানি ও সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলতি বছর ইউক্রেনের খাদ্যশস্য খাতে লোকসান ৩২০ কোটি ডলার ছাড়াতে পারে। ফলে আগামী বছরগুলোয় দেশটিতে আবাদ কমে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনের কৃষক ইউনিয়ন সম্প্রতি এমনটা জানিয়েছে। খবর রয়টার্স।
বর্তমানে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও রফতানিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ ইউক্রেন। বৈশ্বিক সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতিতে দেশটি বড় প্রভাবক। প্রথাগতভাবে ইউক্রেনের কৃষি খাত অনেক বেশি লাভজনক। কিন্তু যুদ্ধের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও কৃষকরা গত বছর এ খাতের কোনো আর্থিক প্রতিবেদন দিতে পারেনি।
রুশ আগ্রাসনের আগে ইউক্রেন কৃষ্ণসাগরীয় গভীর সমুদ্রবন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য রফতানি করত। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে এসব বন্দরের কোনোটি পুরোপুরি এবং কোনোটি আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে আছে।
দেশটি বর্তমানে দানিয়ুব নদীর ছোট বন্দরগুলো দিয়ে খাদ্যশস্য রফতানি করছে। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোয় রফতানিতে রেলপথ ব্যবহার হচ্ছে। রফতানির সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ায় লজিস্টিকস জটিলতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে কৃষকরা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।
এদিকে সমুদ্রবন্দর বন্ধ থাকায় ব্যাপক হারে বেড়েছে আমদানীকৃত জ্বালানি, বীজ, সার ও কৃষি খাতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের দাম। ইউক্রেনের বৃহৎ কৃষি বাণিজ্য গ্রুপ দি এগ্রেরিয়ান কাউন্সিল জানায়, চলতি বছর প্রতি টন গম উৎপাদনে ব্যয় হচ্ছে গড়ে ১৪৬ ডলার। কিন্তু প্রতি টনের গড় বিক্রয়মূল্য ১০২ ডলার। অন্যদিকে এক টন ভুট্টা উৎপাদনে কৃষকদের ব্যয় করতে হচ্ছে ১৪৯ ডলার। কিন্তু শস্যটির বিক্রয়মূল্য ৯৪ ডলার।
কাউন্সিল আরো জানায়, চলতি বছর সূর্যমুখী ও সরিষা তেলবীজ উৎপাদনও অলাভজনক হয়ে পড়েছে। তবে সয়াবিন উৎপাদন করে কিছুটা মুনাফা তুলতে পারছেন কৃষকরা। বড় আকারের লোকসানের কারণে এরই মধ্যে আগামী বছরের জন্য আবাদ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন উৎপাদকরা।
ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রফতানিতে মন্দা ভাব কাটছে না। গত মাসেও রফতানি আগের মাসের তুলনায় ১০ শতাংশ কমেছে। এর মূল কারণ লজিস্টিকস সংক্রান্ত জটিলতা ও প্রধান রফতানি অবকাঠামোগুলোয় রুশ সেনাদের একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ।
ইউসিএবি এগ্রিকালচারাল বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন জানায়, সেপ্টেম্বরে দেশটি সব মিলিয়ে ২১ লাখ টন খাদ্যশস্য রফতানি করেছে। আগস্টে রফতানির পরিমাণ ছিল ২৩ লাখ টন। ইউক্রেন গত মাসে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯০০ টন উদ্ভিজ্জ তেল রফতানি করেছে, আগের মাসের তুলনায় যা ১৩ শতাংশ কম। ওই সময় রফতানি করা হয়েছিল ৫ লাখ ৪৯ হাজার টন।
রুশ সামরিক অভিযানের প্রভাবে গত বছরের শুরু থেকেই ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রফতানিতে ধস নামে। এতে বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে জাতিসংঘ। ফলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে কৃষ্ণ সাগরীয় খাদ্যশস্য চুক্তি সম্পন্ন হয়। কিন্তু এ বছর রাশিয়া চুক্তি থেকে সরে এলে আবারো রফতানি নিয়ে বিপাকে পড়ে ইউক্রেন।
ইউসিএবি জানায়, চলতি মাসে রফতানি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় রাশিয়ার অংশগ্রহণ ছাড়াই অস্থায়ী সামুদ্রিক করিডোরের মাধ্যমে দেশটি কৃষিপণ্য রফতানি বাড়াতে সক্ষম হবে।
এনজে