বৈশ্বিক বাজারে স্বর্ণের দর শুক্রবার পাঁচ মাসের শীর্ষ ওঠে। তবে সোমবার থেকে দাম কমতে শুরু করেছে। ডলার শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের চাহিদা বাড়ায় ধাতুটির বাজার নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত বৃহৎ অঞ্চলে ছড়ানোর আশঙ্কা কিছুটা কমার লক্ষণ দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। এটিও স্বর্ণের চাহিদা কমাতে প্রভাবকের ভূমিকা রেখেছে। খবর রয়টার্স।
স্পট মার্কেটে সোমবার স্বর্ণের দাম দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। আউন্সপ্রতি দাম নেমেছে ১ হাজার ৯৭৮ ডলার ৭ সেন্টে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিউচার মার্কেটেও দাম কমেছে দশমিক ২ শতাংশ। প্রতি আউন্স লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৮৯ ডলার ৮০ সেন্টে।
স্যাকসো ব্যাংকের কমোডিটি স্ট্র্যাটেজির প্রধান ওলে হ্যানসেন বলেছেন, ‘গত দুই সপ্তাহে দাম বাড়ার পর এখন বাজারে সমন্বয় করা জরুরি হয়ে পড়েছে। একইভাবে মার্কিন বন্ড মার্কেটে কী ঘটছে সেদিকেও মনোযোগ দেয়া দরকার। কারণ বন্ডের চাহিদায় উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফন দেখতে পাচ্ছি।’
রয়টার্স জানিয়েছে, ১০ বছর মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়েছে ৫ শতাংশের ওপরে। ২০০৭ সালের জুলাইয়ের পর এটিই সর্বোচ্চ। ফলে সুদহীন স্বর্ণের ক্রয় কমিয়ে বন্ডে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। আর এতেই দাম কমেছে ধাতুটির।
ইসরায়েল-হামাসের সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় গত দুই সপ্তাহে ধাতুটির দাম ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। শুক্রবার স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ডলার ছাড়িয়েছিল। সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই মূল্যবান ধাতুটির দাম ২ হাজার ডলার পার করেছিল।
অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ ক্রয় বাড়িয়ে দেন। ধাতুটির দাম অস্বাভাবিক ওঠানামা না করায় বিশ্বব্যাপী স্বর্ণকে নিরাপদ বিনিয়োগমাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আইজি বাজার বিশ্লেষক ইয়েপ জুন রং বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের কারণে স্বর্ণের চাহিদা বেড়েছে। সম্প্রতি গাজায় ত্রাণ ও মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ দেয়ায় ইসরায়েলের সম্ভাব্য স্থল অভিযান বিলম্বিত হতে পারে। এ কারণে দাম কিছুটা কমেছে। তবে অভিযান শুরু হলে ধাতুটির দাম আবারো বাড়তে পারে। সাময়িকভাবে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যমটির বাজার যেতে পারে নিয়ন্ত্রণের বাইরেও।’
টিডি সিকিউরিটিজের বিশ্লেষকরা বলেছেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ সুদহার ও ডলারের চাহিদা বাড়ায় স্বর্ণের চাহিদা মন্থর হয়েছে। দাম আরো বাড়বে যদি সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়ায়।’
ভূরাজনীতি ছাড়াও বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি সূচক, তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির জিডিপির অবস্থা, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের সুদহারগত সিদ্ধান্ত এবং আর্থিক অবস্থা বোঝার জন্য বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির দিকে নজর রাখছেন।
সর্বশেষ তথ্যমতে, শিকাগো মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জের (সিএমই) কমোডিটি এক্সচেঞ্জ ইনকরপোরেশন বা কোমেক্সে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত সাতদিনে দীর্ঘমেয়াদে স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৮৬৭টি।
এদিকে স্পট মার্কেটে কমেছে রুপার দাম। দশমিক ৫ শতাংশ কমে আউন্সপ্রতি ধাতুটির দাম নেমেছে ২৩ ডলার ২২ সেন্টে। প্লাটিনামের দর দশমিক ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮৯২ ডলার ৬০ সেন্টে। তবে বেড়েছে প্যালাডিয়ামের দাম। দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে দাম উঠেছে ১ হাজার ১০০ ডলার শূন্য ৫ সেন্টে।
এনজে