ক্রমেই বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন। বিশ্ববাজারে রফতানিতেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখছে দেশটি। ফলে চলতি বছর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশটির শীর্ষ রফতানি পণ্য হতে যাচ্ছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। খবর অয়েলপ্রাইস ডটকম।
জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ও এর মিত্র দেশগুলো বছরের শুরু থেকেই পণ্যটির উত্তোলন কমাচ্ছে। উদ্দেশ্য বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা। এ সুযোগে যুক্তরাষ্ট্র উত্তোলন বিপুল মাত্রায় বাড়াচ্ছে। চলতি ও আগামী বছর দেশটির উত্তোলন রেকর্ড স্পর্শ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা জানান, ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় গত বছরের শুরুর দিকে রুশ জ্বালানি তেলের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বছরের শেষ দিকে দেশটি থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। জবাবে রাশিয়াও বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলোর বাইরে তেল রফতানি না করার ঘোষণা দেয়। এমন বাস্তবতায় ইইউর জ্বালানি তেল আমদানির নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি জ্বালানি তেল রফতানি প্রবৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পর দেশটি জ্বালানি বাজারে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) অক্টোবর শর্ট-টার্ম এনার্জি আউটলুকে বলা হয়, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে দৈনিক ১ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার ব্যারেলে। আগামী বছর তা আরো বেড়ে দৈনিক ১ কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার ব্যারেলে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই দেশটি রফতানি করেছে গড়ে দৈনিক ৩৯ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল করে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের রফতানির তথ্য পরিষেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডসিটির বিশ্লেষক কেন রবার্টস জানান, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ পণ্য রফতানি করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। এ বছরের বাকি মাসজুড়েও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো দেশটির শীর্ষ রফতানি পণ্য হয়ে উঠবে এটি।
ওয়ার্ল্ডসিটির দেয়া তথ্যমতে, আগস্টেই যুক্তরাষ্ট্র ১ হাজার ৩০ কোটি ডলারের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি করেছে, যা মোট রফতানি আয়ের ৬ শতাংশ। এর পরই রয়েছে গ্যাসোলিন ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য।
মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানায়, এ বছরের প্রথমার্ধে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ গন্তব্য ছিল ইইউ। এ সময় অঞ্চলটিতে দৈনিক ১৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল রফতানি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল এশিয়ার দেশগুলো। এ অঞ্চলে ছয় মাসে রফতানি করা হয় দৈনিক ১৬ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল করে। এশিয়ার মধ্যে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় সবচেয়ে বেশি রফতানি করা হয়েছে। এছাড়া কানাডা, আফ্রিকা এবং মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয়ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এনজে