প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে। এখানে আকর্ষণীয় প্যাকেজ ও ট্যাক্স ইনসেন্টিভ রয়েছে। একই সাথে রয়েছে শতাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্ক।
গতকাল সোমবার (২৩ অক্টোবর) ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের ওপেরা বলরুমে 'বাংলাদেশ-ফ্রান্স ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট' উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় তিনি এ আহবান জানান।
সালমান এফ রহমান বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। এটি গত ১৫ বছর যাবত অব্যাহত রয়েছে আগামী জানুয়ারিতে নির্বাচন আমরা আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী হবেন। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স।
ফ্রান্স ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকবার ফ্রান্স সফর করেছেন। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। অতএব ফ্রান্স এবং বাংলাদেশের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বর্তমানে অনেক গভীর হয়েছে। তাই ফ্রান্সের ব্যবসায়ীদের কাছে আহ্বান জানাই আপনারা বাংলাদেশ বিনিয়োগ করুন। বিনিয়োগের সুফল পাবেন। বাংলাদেশ এখন ইমার্জিং টাইগার।
তিনি বলেন,স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে অনেকেই তলাবিহীন ঝুড়ি হিসাবে অভিহিত করেছিল। সেখান থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে এবং ২০০৯ সালের আবারো ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে অর্থনীতিসহ সবখানে বিরাট পরিবর্তন করেছেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৯০ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে তা বেড়ে বর্তমান ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় প্রায় ২৯০০ ডলার। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে অষ্টম। এর পরেও খাদ্য নিরাপত্তায় আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি ক্ষেত্রে আমরা অভুতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি।
তিনি আরো বলেন, চাল উৎপাদনে আমরা বিশ্বে চতুর্থ। মাছ উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে আমরা তৃতীয়। এছাড়া সবজি উৎপাদনের আমরা বিশ্বে তৃতীয়। দুধ ও পোল্ট্রি উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর খাদ্য নিরাপত্তা সংকট বিশ্বে একটি আলোচিত বিষয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ ভালো জায়গা অবস্থান করছে। এই দিক থেকে আমরা খুবই ভাগ্যবান। বিদ্যুৎ উৎপাদনেও আমরা সাফল্য দেখিয়েছি। একসময় দিনে ৮ থেকে ৯ ঘন্টা লোডশেডিং হতো। এখন সেটা ব্যাপক কমিয়ে এসেছে। এবং ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ২৪ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এছাড়াও বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ব্যবহারে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। দেশে গত ১৫ বছরে বেসরকারিক খাত ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বর্তমান সরকারও সার্বিক দিক দিয়ে সহযোগিতা করছে। পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এবং বিভিন্ন ব্রান্ড বাংলাদেশ দেশ বিশ্বের মধ্যে পরিচিত লাভ করেছে।
তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ , বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই , ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা, ফ্রান্স-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট পিয়েরে জিন মালগুয়েরেস প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ সকল ক্ষেত্রে অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অবকাঠামোগত সুবিধা, সমুদ্রবন্দর, নদীবন্দর, আন্ত:দেশীয় রেল ও সড়ক যোগাযোগসহ নানা কারণে বাংলাদেশ আজ সবচেয়ে বিনিয়োগবান্ধব এবং সম্ভাবনার দেশ।
তিনি বলেন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির সাথে যেহেতু মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে, সেখানে আমাদের মাথাপিছু আয় শুধু দ্রুত বৃদ্ধিই পাচ্ছে না, প্রায় ৫০ মিলিয়ন বা ৫ কোটি মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ৫০০০ ডলার। আগামী এক দশকে এই সংখ্যা ৭ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
'পাশাপাশি আমাদের ভৌগলিক অবস্থান এমন যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা পণ্যের বাজার ভারত, মায়ানমার, নেপাল এমন কি চীন পর্যন্ত বিস্তার করা সহজতর' বর্ণনা করেন হাছান মাহমুদ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের চিন্তা করছে প্যারিস।
বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বে ফ্রান্স একটি বৃহত্তম বাজার। এই বাজারে বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্যক তথ্য পৌঁছে দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। বাংলাদেশকে ফ্রান্স পার্টনার মনে করে। এটাই আজকের পরিবর্তন।’
ফ্রান্স-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট পিয়েরে জিন মালগুয়েরেস বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে জানতে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চ মাসে বিজনেস ডেলিগেশন যাবে। তারা সেখানের পরিস্থিতি দেখে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে।’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত এই সম্মেলনে বাংলাদেশের বক্তারা আগত বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠান, ব্যক্তি বিনিয়োগকারী ও অংশীজনদের কাছে এ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিনিয়োগবান্ধব নীতি, শেয়ারবাজার ও সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতার বিষয় তুলে ধরেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দুই দেশের দূতাবাস এ সম্মেলনের সহযোগী।
এএ