আগামী বছরগুলোয় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস(এলএনজি) উৎপাদন সক্ষমতা লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়তে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারে নতুন নতুন এলএনজি রফতানি টার্মিনাল এবং তরলীকরণ প্রকল্প বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে, যা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করবে। ফলে জ্বালানিটির দাম যেমন কমে আসবে তেমনি সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগও কেটে যাবে। তবে এমন পরিস্থিতিতে ২০২৫-২০৩০ সাল নাগাদ এলএনজির বৈশ্বিক বাজার অতিরিক্ত সরবরাহের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংস্থাটি।
আইইএ বুধবার এক প্রতিবেদনে এমনটা জানায়।
ওয়ার্ল্ড এনার্জি আউটলুক শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সাল থেকে নতুন অনেক এলএনজি প্রকল্প বাণিজ্যিকভাবে তরলীকরণ ও রফতানি কার্যক্রম শুরু করবে। ফলে জ্বালানিটির সরবরাহ নজিরবিহীন বাড়বে। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর ২৫ হাজার কোটি ঘনফুটেরও বেশি নতুন এলএনজি উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হতে পারে।
২০২১-২৫ সালের মধ্যে এলএনজির বৈশ্বিক রফতানি সক্ষমতা ৬০ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ প্রবৃদ্ধিতে ৭০ শতাংশ অবদান থাকবে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের। ফলে বিশ্ববাজারে এলএনজি আরো বেশি সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হবে বলে জানায় আইইএ।
সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ২০২৫-৩০ সালের মধ্যে এলএনজি উৎপাদন ও রফতানি সক্ষমতা যে হারে বাড়বে, চাহিদা সে হারে বাড়বে না। এর প্রধান কারণ নভেল করোনাভাইরাস মহামারী-পরবর্তী সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে ধীর প্রবৃদ্ধি এবং সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ঊর্ধ্বমুখী বিনিয়োগ।
সরবরাহ প্রবৃদ্ধি চাহিদাকে ছাড়িয়ে গেলে বাজারে এলএনজির মাত্রাতিরিক্ত মজুদ তৈরি হতে পারে। ফলে স্পট মার্কেটে জ্বালানিটির বাজারদরে ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে। ২০১০-১২ সালের মধ্যে জ্বালানিটির বৈশ্বিক বাজার এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল। ব্যাপক হারে দাম কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো লোকসানের মুখে পড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক কোম্পানি উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে বলেও মনে করছেন সংস্থাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
সরবরাহ সংকটে গত বছর এলএনজির দাম রেকর্ড বেড়ে গিয়েছিল। সে তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে বাজারদর ৮০ শতাংশ কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইইএ। প্রতি এমএমবিটিইউর গড় মূল্য দাঁড়াতে পারে ৬ ডলার ৯০ সেন্টে।
চলতি বছরের প্রথম আট মাসে এলএনজির বৈশ্বিক রফতানি ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। ইউরোপের বাজারে ব্যাপক হারে চাহিদা বৃদ্ধি এক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। রফতানিতে শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কাতার। শিপব্রেকার প্রতিষ্ঠান বাঞ্চেরো কস্তা এ তথ্য জানিয়েছে।
বাঞ্চেরো কস্তার প্রতিবেদনে বলা হয়, সমুদ্রপথে এলএনজির বৈশ্বিক বাণিজ্য অব্যাহতভাবে বাড়ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। দেশটিতে সামরিক অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় ইউরোপ। বিপরীতে অঞ্চলটিতে এলএনজি আমদানির পরিমাণ ব্যাপক বেড়ে যায়। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে বৈশ্বিক এলএনজি রফতানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ কোটি ১৮ লাখ টনে।
এনজে