আরও একটি হতাশার হার বাংলাদেশের
স্পোর্টস ডেস্ক প্রকাশ: ২০২৩-১০-৩১ ২১:৫৬:৪২
ব্যাটারদের ভঙ্গুর দশা, বোলাররা দিতে পারছে না আশানুরূপ ফল। টানা পাঁচ হারে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ দল, হতাশ করেছে চাপে থাকা পাকিস্তানের বিপক্ষেও। ব্যাটারদের পর বোলারদের বাজে পারফরম্যান্সে, বাবরদের বিপক্ষে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে সাকিব বাহিনী।
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ভারত বিশ্বকাপের ৩১তম ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে এদিন ৪৫.১ ওভারে মাত্র ২০৪ রানে গুটিয়ে যায় টাইগারদের ইনিংস।
জবাব দিতে নেমে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশি বোলারদের তুলোধুনো করে ১০৫ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নিয়েছে পাকিস্তান। তাতে টানা চার হারের পর চলতি বিশ্বকাপে জয়ের মুখ দেখলো বাবর আজমের দল।
সহজ লক্ষ্য তাড়ায় নেমে এদিন শুরু থেকেই টাইগার বোলারদের ওপর চড়াও হন দুই পাক ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ফখর জামান। ২১ ওভারের মধ্যে তারা দলকে এনে দেন ১২৮ রান। ২২তম ওভারের প্রথম বলে গিয়ে উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজকে সুইপ খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন আব্দুল্লাহ শফিক। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেও লাভ হয়নি। ৬৯ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৬৮ রানে থামে তার ইনিংস।
দলীয় ১৬০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। ক্রিজে নেমে সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক বাবর আজম। ১৬ বলে ৯ রান করে মিরাজকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ধরা পড়েন তিনি। অন্যদিকে পাঁচ ম্যাচ পর ফেরা ফখর ফেরেন ব্যক্তিগত ৮১ রানের ইনিংস খেলে। ৭৪ বলে ৭ ছক্কা ও ৩ চারে সাজানো ছিল তার ইনিংসটি। তাড়াহুড়ো না করলেও সেঞ্চুরিটাও তুলে নিতে পারতেন তিনি।
শেষদিকে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ২১ বলে ২৬ ও ইফতিখার আহমেদের ১৫ বলে ১৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করে ৩২.৩ ওভারে জয় নিশ্চিত করে পাকিস্তান। ৯ ওভার বল করে ৬০ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফলতম বোলার মিরাজ।
টানা চার হারের পর চলতি বিশ্বকাপে জয়ের মুখ দেখলো পাকিস্তান। কিন্তু ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারল না বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে আসর শুরুর পর টানা ষষ্ঠ হার দেখলো টাইগাররা। বিশ্বকাপ ইতিহাসে একটানা এত ম্যাচ এর আগে কখনো হারেনি বাংলাদেশ।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে এদিন বোলারদের লড়াকু পুঁজি এনে দিতে পারেননি ব্যাটাররা। ব্যাটিংয়ে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শাহিন আফ্রিদির ইনসুইংয়ে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হন তানজিদ তামিম। ব্যাডপ্যাচে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তও টেকেননি। শাহিন পরের ওভারে বল করতে এসে ফেরান ৪ রান করা শান্তকে। পা লক্ষ্য করে বল ফেলেছিলেন শাহিন। শান্ত অনসাইডে সজোরে শট খেলেন। কিন্তু ক্যাচ লুফে নেন উসামা মীর। শেষ ছয় ম্যাচ মিলিয়ে ৪.৬৬ গড়ে মাত্র ২৮ রান করেছেন টাইগারদের সহঅধিনায়ক।
৫ ওভারে ১০ রানে দুই উইকেট হারানোর পর মুশফিকুর রহিমকে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। ব্যর্থ হন তিনিও। হারিস রউফের ইনসুইং তার ব্যাট স্পর্শ করে চলে যায় উইকেটকিপার রিজওয়ানের গ্লাভসে। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৬ ওভারে মাত্র ২৩! ৫ রানেই শেষ হয়েছে মুশফিকের ইনিংস। চতুর্থ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে জুটি গড়েন লিটন দাস। এদিন ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নেমেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আস্থার প্রতিদানও দিয়েছেন ব্যাটে। তাদের জুটিতেই ১১তম ওভার শেষে দলীয় অর্ধশতক পূর্ণ করে টাইগাররা। এরপর ১৭তম ওভারে এই জুটি পূর্ণ করে ৫০ রান। ২১তম ওভারে শতরান পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। কিন্তু ঠিক এর পরেই বিদায় নেন লিটন।
লিটন না পারলেও অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ৭০ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে ৫৬ রান করে শাহিনের বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। এরপর ব্যাট করতে নেমে একটা ছক্কা মেরেই ওসামা মীরের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তাওহীদ হৃদয়।
সাকিব-মিরাজ জুটি বেঁধে দলকে ২০০ এর দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সাকিব বিদায় নেন ১৮৫ রানে। বিশ্বকাপে এসে শর্ট বলে সংগ্রাম করতে হচ্ছে সাকিবকে। পাকিস্তানের বিপক্ষেও শর্ট বলে ঠিকঠাক খেলতে পারছিলেন না। তবে সময়ের সঙ্গে ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন টাইগার দলপতি। কিন্তু অর্ধশতকের কাছাকাছি পৌঁছে হারিস রউফের শর্ট বলটা ঠিকমতো পুল করতে পারলেন না। সোজা ক্যাচ তুলে ধরা পড়লেন আঘা সালমানের হাতে। ৬৪ বলে ৪ চারে ৪৩ রান করে আউট হন টাইগার দলপতি।
৪৪ ওভারের প্রথম বলে মোহাম্মদ ওয়াসিমের দারুণ গতির বল তুলে মারতে চেয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু বলে-ব্যাটে হয়নি। ৩০ বলে ১ চার ও ১ ছয়ে ২৫ রান করেন মিরাজ। মিরাজের বিদায়ের পর আর বেশিক্ষণ টেকেনি বাংলাদেশ। শেষ তিন ব্যাটারকেই ফেরান মোহাম্মদ ওয়াসিম।
পাকিস্তানের পক্ষে সফলতম বোলার শাহিন আফ্রিদি। ৯ ওভারে এক মেডেনসহ মাত্র ২৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন তিনি। ৮.১ ওভারে ৩১ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন মোহাম্মদ ওয়াসিমও। হারিস রউফের শিকার হয়েছেন দুই টাইগার। বাকি দুটি গেছে ইফতিখার ও উসামা মীরের ঝুলিতে।
এএ