জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের দপ্তরে (ওএইচসিএইচআর) সাম্প্রতিক বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে সরকার।
বুধবার (১ নভেম্বর) জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠির সঙ্গে ২৮ অক্টোবরের সহিংসতার কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ যুক্ত করে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের এক দফা অসাংবিধানিক দাবির নামে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কর্তৃক সহিংসতায় সরকার বিস্মিত। বিএনপির অনুরোধে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কিছু নির্দিষ্ট শর্তে গত ২৮ অক্টোবর তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। তবে, বিএনপি কর্মীরা নির্বিচারে রাস্তায় সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ এবং ব্যক্তি ও সম্পদের ওপর হামলা করে।
এতে বলা হয়, এ সহিংসতার প্রধান লক্ষ্যবস্তু হয়েছে অরাজনৈতিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, নিরাপরাধ নাগরিক, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি সম্পত্তি। অসংখ্য ছবি এবং ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের একজন সদস্যকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে- দিনের আলোতে, প্রশস্ত প্রকাশ্য রাস্তায়, আরও কয়েক ডজন আইন প্রয়োগকারী এজেন্টদের আক্রমণ ও আহত করা হয়েছিল। বাসের কন্টাক্টরকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বাস, ফায়ার সার্ভিসের ট্রাকসহ অন্যান্য গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়, প্রধান বিচারপতি ও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের অন্যান্য বিচারকদের বাসভবন ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ হাসপাতাল চত্বর ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকটি থানায় ভাঙচুর করা হয়, সাংবাদিক ও ক্যামেরাপারসনদের আক্রমণ করা হয়েছে। এমনকি বিএনপির এমন ক্রমাগত নৃশংসতার মুখেও সরকার এবং এর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত সংযম ও ধৈর্য্য প্রদর্শন করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সর্বোত্তম শক্তি প্রয়োগ করেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করতে এবং সহানুভূতি অর্জনের জন্য বিএনপি মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, বিএনপি সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভুয়া উপদেষ্টার পরিচয় দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করার পেছনে বিএনপির উদ্দেশ্য হচ্ছে আগামী নির্বাচন ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা। দুর্ভাগ্যবশত, ওএইচসিএইচআর বিএনপির মিথ্যা তথ্য প্রচারের জন্য বিভ্রান্ত হয়ে থাকতে পারে।
এতে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়, ওএইচসিএইচআর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সমাদৃত। এর কাজ অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতার নীতিগুলো প্রতিফলিত করবে। ফলে কোনো বিবৃতি প্রকাশের আগে সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও তা যাচাই করে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকার আশা করে গত ৩১ অক্টোবর ওএইচসিএইচআর যে বিবৃতি দিয়েছে বাস্তবতার নিরিখে তা সংশোধন করবে।
সরকার যে কোনো মূল্যে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশন (ইসি) স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা। আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা নিয়মিত সংলাপ করছে। ইসি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। এ বিষয়ে ইসি বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিদেশি গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
এরআগে ওএইচসিএইচআর গত মঙ্গলবার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের সংকটের এ সময়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনে সরকারকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান
বিবৃতিতে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সব নাগরিকের মানবাধিকার সমুন্নত রাখার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে এতে ২৮ অক্টোবরের ঘটনার জন্য মুখোশধারীদের দায়ী করা হয়। জাতিসংঘের ধারণা, মুখোশধারীদের অনেকেই সরকার সমর্থক।
এনজে