রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেন থেকে ২০২৩-২৪ বিপণন মৌসুমে (জুলাই-জুন) খাদ্যশস্য রফতানি কমেছে। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত দেশটির রফতানি নেমেছে ৯৮ লাখ টনে। গত বছরের একই সময়ে দেশটির রফতানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৪৩ লাখ টন। সে হিসাবে বছরওয়ারি রফতানি কমেছে ৪৫ লাখ টন। সম্প্রতি ইউক্রেনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি এ বছর ৪৯ লাখ টন গম, ৪১ লাখ টন ভুট্টা, সাত লাখ টন বার্লি রফতানি করেছে। গত মৌসুমের একই সময়ে ইউক্রেন ৫৪ লাখ টন গম, ৭৭ লাখ টন ভুট্টা ও ১২ লাখ টন বার্লি রফতানি করেছিল। রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পাঁচ লাখ টন খাদ্যশস্য রফতানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ লাখ ৭০ হাজার টনের চেয়ে বেশ কম।
এর আগে গত মাসেও দেশটির রফতানির পরিমাণ নিম্নমুখী ছিল। গত অক্টোবরে ৩ লাখ ৫১ হাজার টন শস্য রফতানি করেছে, যা আগের বছরের একই মাসের ১৩ লাখ ২০ হাজার টন থেকে যথেষ্ট কম। ইউক্রেনের মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ বিপণন বছরে দেশটি ২ কোটি ৯৫ লাখ শস্য রফতানি করেছে। চলতি বিপণন বছরে রফতানির পরিমাণ অর্ধেকে নামার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটসের সিনিয়র শস্যপণ্য বিশ্লেষক ভিক্টোরিয়া সিনিসিনা বলেন, ‘২০২৩-২৪ বিপণন বছরে ইউক্রেনের শস্য রফতানি ১ কোটি ৯৫ লাখ টনে নামতে পারে।’
ইউক্রেন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শস্য রফতানিকারক। রুটির ঝুঁড়ি হিসেবে খ্যাত দেশটির প্রধান শস্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে গম, ভুট্টা ও বার্লি। দেশটিতে উৎপাদিত এসব খাদ্যশস্যের বেশির ভাগই রফতানি হয় কৃষ্ণ সাগর দিয়ে। কিন্তু রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের পর নৌপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে। মাঝে কৃষ্ণ সাগর শস্য চুক্তির আওতায় ইউক্রেন নিরাপদেই শস্য রফতানি করেছিল। গত জুলাইয়ে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে আর শস্য চুক্তি নবায়ন করেনি মস্কো। এর পর থেকে দানিউব নদীতে ইউক্রেনীয় কৃষি অবকাঠামোয় আক্রমণ চালিয়ে আসছে রুশ বাহিনী। ফলে নৌপথে কিয়েভের রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, আগস্টে রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শস্যবোঝাই ৫১টি কর্গো জাহাজ একটি নতুন করিডোর দিয়ে কৃষ্ণ সাগরে প্রবেশ করেছে। নতুন করিডোর দিয়ে সরাসরি বসফরাস প্রণালিতে যাওয়া যায় না। করিডোরটি ইউক্রেন ও ন্যাটো সদস্য রোমানিয়া বুলগেরিয়ার উপকূলঘেঁষে গেছে। তবে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ও সামুদ্রিক মাইনের হুমকির কারণে ২৬ অক্টোবর থেকে করিডোরটিও সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছিল।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক সরকারি রেজল্যুশনে বলা হয়েছে, ট্যাক্স এড়ানোর মতো অপব্যবহার বন্ধে শিগগিরই প্রধান শস্যপণ্যগুলোর জন্য একটি নতুন রফতানি ব্যবস্থা চালু করা হবে। দেশটিতে ২০২৩ সালে ৭ কোটি ৯০ লাখ টন খাদ্যশস্য ও তেলবীজ উৎপন্ন হবে, যার মধ্যে প্রায় পাঁচ কোটি টন রফতানি হবে বলে প্রত্যাশা করছে ইউক্রেন।
এনজে