গত দুই আসরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল ২০১১ সালের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে। সবশেষ বিশ্ব আসর থেকে তাদেরকে ছিটকে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। সে কিউইদের বিপক্ষে ২০২৩ সালে এসে ঘরের মাঠে প্রতিশোধ নেয়ার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছে রোহিত শর্মার দল।
গত বিশ্বকাপে ২৩৯ রান তাড়ায় নেমে ১৮ রানে হারের আক্ষেপ নিয়ে বিদায় নিয়েছিল ভারত। বুধবার (১৫ নভেম্বর) মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে রানের পাহাড় গড়ে সে আক্ষেপই যেন পূরণ করলেন রোহিত-কোহলিরা।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিউই বোলারদের তুলোধুনো করে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৯৭ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছে ভারত। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এত রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই কারও। এদিন এক সেঞ্চুরিতে তিন রেকর্ড গড়ে আউট হয়েছেন বিরাট কোহলি। সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন শ্রেয়াস আইয়ারও। এছাড়া ৮০ রানে শুভমান গিল ও ৩৯ রানে লোকেশ রাহুল অপরাজিত ছিলেন।
ব্যাট করতে নেমে এদিন শুরু থেকেই মারকুটে ছিলেন রোহিত। গিলকে নিয়ে ৮ ওভারের মধ্যে দলের খাতায় ৭০ রান যোগ করেন তিনি। তবে ভাগ্য সহায় না হওয়ায় ফিফটি থেকে ৩ রান দূরে থেকে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। ২৯ বলে ৪ ছক্কা ও ৪ চারের মারে ৪৭ রান করে টিম সাউদির শিকার হন রোহিত।
অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ফিফটি তুলে নেন গিল। ৪১ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ফিফটি হাঁকিয়ে তিনি হাঁটতে থাকেন সেঞ্চুরির পথে। বিরাট কোহলির সঙ্গে জুটি গড়ে তুলোধুনো করতে থাকেন কিউই বোলারদের। কিন্তু ২৩তম ওভারে মিচেল স্যান্টনারের বল মোকাবিলা করতে গিয়ে পায়ের মাংসপেশিতে টান লাগে গিলের। দলের চিকিৎসক এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলেন না তিনি। শেষমেশ সতীর্থদের গায়ে ভর দিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাকে। ডাগআউটে যাওয়ার আগে ৬৫ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৯ রান করেন তিনি। গিল যখন ক্রিজ ছাড়েন তখন ভারতের সংগ্রহ ২২.৪ ওভারে ১৬৪ রান।
গিলের বিদায়ের পর শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গে ১৬৩ রানের জুটি গড়ে ইনিংসে ৪৪তম ওভারে আউট হন কোহলি। তার আগে গড়েন তিন রেকর্ড। চলতি আসরে অষ্টম পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসে তিনি ছাড়িয়ে যান শচীন টেন্ডুলকার ও সাকিব আল হাসানকে। ২০০৩ বিশ্বকাপে শচীন আর ২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিব ৭টি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছিলেন। ব্যক্তিগত ৮০ রানের সময় শচীনকে পেছনে ফেলে এক আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন ৩৫ বছর বয়সী এ ব্যাটার। ৬৭৩ রান করে দুই দশক ধরে রেকর্ডটি নিজের দেখলে রেখেছিলেন শচীন। আর সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৫০ শতকের মালিক বনে যান তিনি। এর আগে ৪৯ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ক্রিকেট ঈশ্বর শচীনের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ শতকের তালিকায় ছিলেন তিনি। যেটা এখন এককভাবে নিজের করে নিলেন।
শেষ পর্যন্ত ১১৩ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ১১৭ রান করে ওভার বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে কনওয়ের হাতে ধরা পড়েন তিনি। অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে শতক তুলে নেন শ্রেয়াস আইয়ার। ৬৭ বলে ৮ ছক্কা ও ৩ চারের মারে মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৭০ বলে ১০৫ রান করে ৪৯তম ওভারে বোল্টের শিকার হন তিনি। এদিন কেবল ব্যর্থ ছিলেন সূর্যকুমার যাদব। ২ বলে ১ রান করে সাউদির শিকার হন তিনি। শেষদিকে বিশ্রাম থেকে ফিরে গিল ১ বল মোকাবিলা করে ১ রান করেন। তাতে ৬৬ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। অপরপ্রান্তে ২০ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ রান করে মাঠ ছাড়েন রাহুল।
কিউই বোলারদের মধ্যে এদিন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিলেও বেশ খরুচে ছিলেন সাউদি। ১০ ওভার বল করে ১০০ রান দেন তিনি। আরেক উইকেট শিকারি বোল্টের খরচ ৮৬ রান।
এএ