বৈশ্বিক বাজারে শিগগিরই মূল্যবান ধাতু স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি রেকর্ড ২ হাজার ৫০০ ডলারে উঠতে পারে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যমের ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা এক্ষেত্রে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। খবর আরটি।
ফিউচার মার্কেটে গত কয়েক সপ্তাহে স্বর্ণের দাম ৩ শতাংশ বেড়েছে। গত শুক্রবার আন্তর্জাতিক বাজারের শেষ সাপ্তাহিক কার্যদিবসে প্রতি আউন্সে ধাতুটির বাজার ২ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। ডলারের অবনমনে স্পট ও ফিউচার উভয় মার্কেটে ধাতুটির মূল্য ২ হাজার ডলারের ওপরে অবস্থান করছে।
সর্বশেষ লেনদন তথ্য বলছে, স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১ ডলার ৯৭ সেন্টে। আর যুক্তরাষ্ট্রে ফিউচার মার্কেটে দাম উঠেছে ২ হাজার ৩ ডলারে। এর আগে গত মঙ্গলবার মূল্যবান ধাতুটির দাম গত তিন সপ্তাহের সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭ ডলার ২৯ সেন্টে ওঠে।
বিজনেস ইনসাইডারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নিউইয়র্কভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফান্ডস্ট্র্যাটের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষক মার্ক নিউটন বলেছেন, ‘চলতি মাসের সর্বোচ্চ দাম ছিল গত মঙ্গলবার। এখন যেকোনো এক সপ্তাহে লেনদেনের গড় দর ২ হাজার ৬ ডলার ৩৭ সেন্টে উঠলেই তা গত বসন্তকালের সাপ্তাহিক সর্বোচ্চ দামের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাবে।’
নিউটন বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে স্বর্ণের দাম নতুন করে সর্বকালের সর্বোচ্চে উঠতে যাচ্ছে। যেকোনো সময় প্রতি আউন্সের দাম ২ হাজার ৯ ডলার ৪১ সেন্টের ওপরে উঠলেই স্বর্ণের বাজার ২ হাজার ৬০ থেকে ২ হাজার ৮০ ডলারের নতুন রেঞ্জে প্রবেশ করবে।’
দাম ২ হাজার ৮০ ডলারের রেঞ্জ ছাড়িয়ে গেলে বাজার খুব দ্রুতই বাড়তে থাকবে বলে প্রত্যাশা তার। বিজনেস ইনসাইডারকে এ বিশ্লেষক বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা, দাম ২ হাজার ৫০০ ডলারের ঘরে উঠবে। চলমান ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও বাজার অস্থিরতা চক্র ধাতুটির দাম বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে।’
তবে কবে নাগাদ স্বর্ণের বাজার আড়াই হাজার ডলারের ঘরে উঠবে এ বিষয়ে তিনি নির্দিষ্ট করে কখনো জানাননি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ দাম এ রেঞ্জে না উঠলেও একে মধ্যবর্তী টার্গেট বলে মনে করেন তিনি।
গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে স্বর্ণের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। মূল্যস্ফীতির আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণের বাজারে ঝুঁকছেন। ব্যবসায়ী ও বাজার বিশ্লেষকরা আশা করছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান ও অনিশ্চয়তা স্বর্ণের দাম আরো বাড়িয়ে দেবে।
মহামারী, সামরিক সংঘর্ষ, শেয়ারবাজার ধস ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় স্বর্ণে বিনিয়োগকে নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিনিয়োগকারীরা এ সময় স্বর্ণ ক্রয় করে সম্পদ ধরে রাখতে চান। যেকোনো সংকটকালে মূল্যস্ফীতির ফলে নগদ অর্থ বা ডলারে বিনিয়োগ অনিরাপদ হয়ে ওঠে। হেজ ফান্ডের পরিবর্তে এ সময় সেফ হ্যাভেন হিসেবে পরিচিত স্বর্ণে বিনিয়োগ বাড়ান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, স্বর্ণের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পাশাপাশি দাম বেড়েছে অন্যান্য ধাতুরও। স্পর্ট মার্কেটে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে রূপার দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ, যা গত ১২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। আউন্সপ্রতি ধাতুটির দাম উঠেছে ২৪ ডলার ৩ সেন্টে। প্লাটিনামের দাম ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সে মূল্য দাঁড়িয়েছে ৯৩০ ডলার ৬১ সেন্টে। প্যালাডিয়ামের দামও বেড়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ। আউন্সপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬৮ ডলার ৮৩ সেন্টে। এ নিয়ে টানা দুই সপ্তাহ প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের বাজার ঊর্ধ্বমুখীতায় শেষ হয়েছে।
এনজে