বাংলাদেশের গ্রামীণ ও কৃষক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও সহনশীলতা অর্জনে ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের সাথে কাজ করতে যাচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। এই সহযোগিতার অংশ হিসেবে দুটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে যা ২৫,৫০০ কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে অবদান রাখবে। এই প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে প্রায় ২৬ মিলিয়ন অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ।
প্রথম প্রকল্পের অংশ হিসাবে, বগুড়া, জয়পুরহাট এবং সিরাজগঞ্জে বসবাসকারী ২৫,০০০ কৃষকদের মধ্যে ১২৫,০০০ ফল, ঔষধি এবং কাঠের গাছের চারা বিতরণ করতে টিএমএসএস-এর সাথে সহযোগিতা করবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। এইসব এলাকার বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর একটি অংশ বর্তমানে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অপুষ্টির সম্মুখীন। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাংকটি টিএমএসএস-এর সাথে কাজ করে কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের সবজীর বীজ বিতরণ করবে যাতে করে তারা বাড়ির পাশে সবজীর বাগানে উৎসাহিত হয়। এই প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে এইসব অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে টেকসই জীবনমান অর্জনে সাহায্য করবে।
টিএমএসএস-এর সাথে অংশীদারিত্বে পরিচালিত দ্বিতীয় প্রকল্পটি বগুড়া এবং পটুয়াখালীর কৃষকদের সূর্যমুখী উৎপাদন বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ৫০০ কৃষকের মাঝে ১,৮০০ কেজি সূর্যমুখী বীজ বিতরণ করবে। এছাড়াও, কৃষকদের সুবিধার্থে জমি চাষে সহযোগীতার পাশাপাশি সার এবং কীটনাশক সরবরাহ করবে ব্যাংকটি। একইসাথে কৃষকেরা সঠিকভাবে তেল উৎপাদনের সরঞ্জামের ব্যবহারবিধি, তেল প্রক্রিয়াজাতকরণ, এবং স্টেকহোল্ডার নির্বাচন ও বাজারজাতকরণের উপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পাবেন। সূর্যমুখী বীজের উচ্চ অভিযোজনযোগ্যতা এবং বীজের তেলের গুণাবলির উপর গুরুত্বারোপ করে কৃষকদের মাঝে সূর্যমুখী চাষ নিয়ে সচেতন বৃদ্ধি করতে এই প্রকল্পটি বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “স্থানীয় খাদ্য উৎপাদনকে শক্তিশালী করে কৃষিব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করার মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে রোপিত ফলজ এবং বনজ বৃক্ষের পাশাপাশি শস্যগুলো আমাদের জনগোষ্ঠীর তথা অর্থনীতির উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করে যাওয়া টিএমএসএস-এর সাথে এই দুটি প্রকল্পের অংশীদার হতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত।”
ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম বলেন, “আমরা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-এর সাথে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অংশীদার হতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা মনে করি, এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত এই জনগোষ্ঠীর সামাজিক মর্যাদা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।”
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ এবং টিএমএসএস-এর মধ্যকার এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় এবং ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘের (টিএমএসএস) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম।
দীর্ঘ ১১৮ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম পরিচালনাকারী স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-ই দেশের একমাত্র বহুজাতিক ব্যাংক। দেশের কৃষি, অর্থনীতি ও সামাজিক অগ্রগতিতে স্টেকহোল্ডারদের সুযোগ বৃদ্ধি করে সার্বিক উন্নতিতে ব্যাংকটি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ক্রমাগত উদ্ভাবনের সঙ্গে দেশের কৃষি, অর্থনীতি ও সমৃদ্ধির যাত্রায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ, টিএমএসএস হলো একটি বাংলাদেশী মাইক্রোক্রেডিট এনজিও। ১৯৮০ সালে অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম-এর হাত ধরে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর উন্নতি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে একটি উপযুক্ত সমাজ গঠনের জন্য টিএমএসএস কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় টিএমএসএস তাদের কাজের ধারা অব্যাহত রেখেছে।
এএ