জনগণের অধিকার আদায়ের চলমান আন্দোলন আরও তীব্র থেকে তীব্রতর করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। একইসঙ্গে জামায়াতের আমীরসহ সকল নেতৃবৃন্দ, আলেম ওলামাদের মুক্তি, কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা ও সন্ত্রাস নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে এবং ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যে সব কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, তা সর্বাত্মকভাবে সফল করার জন্য জামায়াতের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভাকাক্সক্ষী, সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিরোধীদলের নেতৃবৃন্দকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা এবং সারাদেশে গুপ্ত হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ-এর সঞ্চালনায় প্রেস ব্রিফিং-এ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব আবদুর রহমান মুসা প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমান স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের শাসনামলে জনগণের ভোটাধিকার, বেঁচে থাকা ও মত প্রকাশের অধিকার, স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকারসহ সকল মৌলিক মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে। বর্তমানে যাদের বয়স ৩৩ বছর, তাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলেও ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ায় গত ১৫ বছর যাবত তারা তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারছেন না। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়ে সরকার নির্বাচনের নামে প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করে আবারো ক্ষমতা দখলের জন্য আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দ্বারা দেশবাসীর দাবি উপেক্ষা করে তফসিল ঘোষণা করেছে। প্রায় সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং পেশাজীবী সম্প্রদায়সহ দেশের জনগণ এই ফরমায়েসি তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। দলীয় লোকদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে এবং ডামি প্রার্থী ঘোষণা করে সরকার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিজেদের দলীয় নির্বাচনে পরিণত করেছে এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকে একটি প্রহসনের নাটকে রূপ দিতে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের সকল নিয়ম-কানুন পদদলিত করে ঘুষ, ভয় ও প্রলোভন দেখিয়ে কিছু লোককে বাগিয়ে নিয়ে বিরোধী প্রার্থী ঘোষণা করে গণতান্ত্রিক ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা সরকারের এই অপরাজনীতির ধিক্কার জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, সরকারের সাজানো ও প্রহসনের নির্বাচনকে সফল করার লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে মিথ্যা ও বায়বীয় মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে আটক রাখা হচ্ছে। বর্তমানে বিরোধীদলের ২০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী কারাগারে আটক রয়েছেন। নির্বাচনকে সফল ও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের আটকের পাশাপাশি বিচার বিভাগকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আদালত মানুষের সর্বশেষ আশ্রয় স্থল। আদালতকে অপব্যবহার করে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে দমন-পীড়ন চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। দেশে আইনের শাসনকে বিপর্যয় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। নিম্ন আদালতে সরকারের ছক অনুযায়ী বিচার কার্য চালানো হচ্ছে ও রাজনৈতিক নেতাদেরকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এমনকি সকল নিয়ম লঙ্ঘন করে গভীর রাত পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুনানি ছাড়াই বিরোধীদলের সম্ভাব্য নির্বাচনী প্রার্থীদেরকে দ্রুত সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে, যা বিচারক ও বিচার ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছে।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর জানান, এই পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী দলসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের ৭ শতাধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করার এবং কারাগারে আটক রাখার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে চলেছে। গত ৩ ডিসেম্বর, দীর্ঘ ১১ বছর আগে ২০১২ সালে দায়ের করা রামপুরা থানার একটি সাজানো মামলায় উল্লেখিত নেতৃবৃন্দসহ ৭২ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচারের নামে প্রহসন করে তাদেরকে শাস্তি দেয়ার চক্রান্ত চলছে। আদালতকে অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে ব্যবহার করে দেশের বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারী বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের উপর চোরাগুপ্তা হামলা চালানো হচ্ছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে বাসা-বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে না, রাস্তায়ও নামতে দিচ্ছে না। অতি সম্প্রতি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলে, চট্টগ্রামে, ফেনীতে ও আশুলিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্য দিবালোকে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও শ্রমিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে হত্যা করছে ও আহত করে সারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। পুলিশ এসব ঘটনার কোনো মামলা নিচ্ছে না। শুধু তাই নয়, জামায়াতের কারাবন্দি আমীর ডা: শফিকুর রহমানের সিলেটের বাসায় গত ২২ নভেম্বর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তল্লাশি চালিয়ে পরিবারের লোকদের হয়রানি করেছে। এসব ঘটনার দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। বিরোধীদলকে নির্বাচনের বাইরে রাখাই সরকারের মূল উদ্দেশ্য। এভাবে বাংলাদেশকে বসবাসের অযোগ্য দেশে পরিণত করা হয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে জনসমর্থনহীন সরকার চোর-ডাকাতির কায়দায় নির্বাচন করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, দেশ আজ এক কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ক্ষমতার জন্য রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দলীয় ক্যাডার ও বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার করে সরকার সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হচ্ছে তারা কোনো বিরোধীদলকে থাকতে দিতে চায় না। তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতকে নির্মূল করবে। দেশের রাজনৈতিক দল ও নেতাদেরকে নির্মূল করার মাধ্যমে দেশকে বিদেশী শক্তির বিচরণ ক্ষেত্র বানানোর জন্য আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী লীগের এ ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জনগণের অধিকার আদায় করতে হলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
এএ