দলে নেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। নেই দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল কিংবা অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের সফল অধিনায়করাও গত ১৬ বছরে যে কৃতিত্ব নিতে পারেননি, সেটা পেয়ে গেলেন কিছুদিন আগে নেতৃত্ব পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত। তার নেতৃত্বে পেসারদের দাপটে সাদা বলের ক্রিকেটে প্রথমবার কিউই দুর্গ জয় করলো বাংলাদেশ।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে ৯ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে টাইগাররা। ৯৯ রান তাড়া করতে নেমে ১ উইকেট হারিয়ে ৩৪.৫ ওভার হাতে রেখেই জয় তুলে নিয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। তাতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শেষ হলো ২-১ ব্যবধানে।
টাইগার পেসার শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব ও সৌম্য সরকার নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। ৫১ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন শান্ত।
গত বছরের ডিসেম্বরে দুর্ভেদ্য কিউই দুর্গে প্রথম জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। তবে সেটা ছিল টেস্ট ক্রিকেটে। এবার সাদা বলের ক্রিকেটেও জয় তুলে নিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। তাও গত ১৬ বছরের ইতিহাসে ১৮টি ওয়ানডে ও ৯টি টি-টোয়েন্টির পর। অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, সাকিব আল হাসান কিংবা তামিম ইকবাল যেটা পারেননি সেটা করে দেখিয়েছেন কিছুদিন আগে নেতৃত্ব পাওয়া শান্ত। ইতিহাস গড়ার পেছনে বড় কৃতিত্বটা অবশ্য টাইগার পেসারদের।
এদিন তানজিন সাকিব, শরিফুল আর সৌম্যদের দাপটে ৩১.৪ ওভারে মাত্র ৯৮ রানেই গুঁড়িয়ে যায় কিউইরা। ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটি তাদের চতুর্থ সর্বনিম্ন সংগ্রহ। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সতর্কতার সঙ্গে ব্যাট চালাতে থাকেন কিউই ওপেনার উইল ইয়াং ও রাচিন রবীন্দ্র। তবে সেটা স্থায়ী ছিল ৩.৫ ওভার পর্যন্ত। কারণ চতুর্থ ওভারের শেষ বলেই কিউইদের সব সতর্কতা চূর্ণ করে আঘাত হানেন পেসার তানজিম সাকিব। তার সঙ্গে যোগ দেন আরেক পেসার শরিফুল।
দলীয় ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। চতুর্থ ওভারের শেষ বলে ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রকে ফেরান পেসার তানজিম সাকিব। তার মিডল স্টাম্প পিচ করে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়ে রাচিন ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। কিউই এই ওপেনার আউট হয়েছেন ১২ বলে ৮ রান করে।
রাচিনের পরে উইকেটে আসেন হেনরি নিকোলস। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলা এই ব্যাটসম্যানকেও সাজঘরে পাঠান সাকিব। ৭.২ ওভারে মাত্র ১ রান করে সাকিবের বলে শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন নিকোলস। এরপরে ইয়াংকে নিয়ে ৫৫ বলে ৩৬ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। তবে তাদেরকে বেশিদূর এগোতে দেননি শরিফুল।
১৬.৩ ওভারে লাথামকে (৩৪ বলে ২১ রান) সরাসরি বোল্ড করেন পেসার শরিফুল। এদিকে একের পর এক উইকেট পড়লেও অপর প্রান্তে অনড় ছিলেন ওপেনার ইয়াং। শরিফুল তাকেও ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেন। ১৮.৪ ওভারে ৪৩ বলে ২৬ রান করা কিউই ওপেনারকে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচে পরিণত করে সাজঘরে পাঠান তিনি। এরপরে ২০.২ ওভারে ২ রান করা মার্ক চাপম্যানকে বোল্ড করেন শরিফুল।
শরিফুলের কিছুক্ষণ ব্যক্তিগত তৃতীয় উইকেটের দেখা পান সাকিবও। তাতে মনে হয়েছে দুজনে যেন উইকেট দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। সাকিবের তৃতীয় ও বাংলাদেশের ষষ্ঠ শিকার হন ১৭ বলে ৪ রান করা টম ব্লান্ডেল। শরিফুল-তানজিমের পরে শান্ত বাজিমাত করেন সৌম্যকে আক্রমণে এনে। তিনি তুলে নেন জস ক্লার্কসন (২৩ বলে ১৬ রান) ও অ্যাডাম মিলনের (২০ বলে ৪ রান) উইকেট। পরপর দুই ওভারে আক্রমণে এসে দুজনকেই সরাসরি বোল্ড আউট করেন তিনি। এরপরে আদিথ্য অশোককেও (১২ বলে ১০ রান) ফেরান সৌম্য। ৩০.৪ ওভারে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অশোক।
অশোকের পরে আরও ৬টি বল খেলার সুযোগ পায় নিউজিল্যান্ড। তবে সেই ৬ বলে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি জ্যাকব ডাফি ও উইলিয়াম ও’ররকে। শেষ পর্যন্ত ও’ররকে বোল্ড করে ইনিংসের সমাপ্তি টানেন মুস্তাফিজ।
সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দেখেশুনে শুরু করে বাংলাদেশ। তবে চোখের সমস্যায় এদিন ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি আগের ম্যাচে ১৬৯ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলা সৌম্য। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে চোখে কিছু একটা সমস্যা হচ্ছিল তার। ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছিলেন না বলে ইঙ্গিত করছিলেন। পানিও দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। পরে ফিজিওকে ডেকে পাঠান। তার চোখ পর্যবেক্ষণ করে দেয়া হয় ড্রপ। তবে সমস্যার সমাধান হয়নি। তাতে ১৬ বলে ৪ রান করা সৌম্য বাধ্য হয়ে ছাড়েন ক্রিজ।
এরপর ওপেনার এনামুল হক বিজয়কে সঙ্গ দিয়ে দলের জয় অনেকটা নিশ্চিত করে ফেলেন অধিনায়ক শান্ত। দুজনই আগ্রাসী ভঙ্গিতে ব্যাট চালাতে থাকেন। ৯ ওভার মোকাবিলায় দুজন মিলে তুলে নেন ৬৯ রান। বাংলাদেশ যখন জয় থেকে মাত্র ১৫ রান দূরে তখন ও’ররকের লেন্থ বলে এজ হয়ে সাজঘরে ফেরেন বিজয়। আউট হওয়ার আগে ৩৩ বলে ৭ চারের মারে ৩৭ রান করেন তিনি। অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি তুলে নেন শান্ত। ৪২ বলে ৮ চারের মারে ৫১ রানের অপরাজি ইনিংসে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন তিনি। ক্রিজের আরেক পাশে ২ বলে ১ রানে অপরাজিত ছিলেন লিটন দাস। ৯৯ রান তাড়ায় নেমে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয় ১৫.১ ওভারে, ৩৪.৫ ওভার হাতে রেখেই।
ওভারের হিসেবে এটি টাইগারদের তৃতীয় বড় জয়। এর আগে ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৮.১ ওভার হাতে রেখে আর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি বছরের মার্চে ৩৬.৫ ওভার হাতে রেখে জয় তুলে নিয়েছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
শেষ ম্যাচে বড় জয় পেলেও প্রথম দুই ম্যাচ হেরে আগেই সিরিজ খুইয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। টেস্ট ও ওয়ানডের পর এবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে ডেডলক ভাঙার চ্যালেঞ্জ টাইগারদের সামনে।
এএ