‘পৃথিবীর সকল নারী ভগবতীর (দেবী দূর্গার) প্রতীক। তিনি সকল প্রাণীর মধ্যে মাতৃরূপে থাকেন, তাই তাকেই প্রণাম।’ এই বিশ্বাসে বুধবার শারদীয় দূর্গোৎসবের তৃতীয় দিন, মহাষ্টমীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী নারীকে দেবী দূর্গার প্রতীক মনে করে পূজা করেছেন। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই কুমারী এক হাতে অভয় দেবেন এবং অন্য হাতে ভক্তের মনবাসনা পূর্ন করে বর দেবেন। তাই বুধবার কুমারী পূজায় রামকৃষ্ণ মিশনে পূণ্যার্থীদের ঢল নামে।
শারদীয় দূর্গোৎসবের চতুর্থ দিনে আজ মহা-নবমী। শাস্ত্র অনুযায়ী বৃহস্পতিবার শাপলা, শালুক ও পশুবলীর মাধ্যমে দেবীর পূজা হবে। তবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে মুল পূজার বাইরেও নানা আয়োজনে মুখরিত থাকবে মণ্ডপগুলো।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী দেবী দূর্গা এবারে-ঘোটকে চড়ে মর্তে এসেছেন। বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীতে দেবী গজের পিঠে করে স্বর্গে চলে যাবেন। ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ স্থিরানন্দজী বলেছেন, আজ মহানবমীতে দেবীর শেষ পূজা হবে। কাল দেবীকে বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হবে। হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র গ্রন্থ চন্ডীতেও বলা হয়েছে, যে দেবী সব প্রাণীর মধ্যে মা হিসেবে থাকেন, তাকে বার বার পূজা করো।
প্রতিবারই এ পূজায় একজন কুমারী মেয়েকে মঞ্চে এনে পূজাপর্ব চলে। রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী হিসেবে এবারে দেবী দূর্গার প্রতীক ‘কুমারী মা’ হয় সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষার্থী প্রণিতা উষ্ণ বন্দোপাধ্যায়। এদিন বেলা ১১টায় মণ্ডপে আসেন ‘কুমারী মা’ প্রণিতা। লাল টুকটুকে বেনারসি পরে আসা ‘কুমারী মা’র চোখে-মুখে ছিল কিছুটা ভীতি আর আনন্দ।
‘কুমারী মা’ আসনে আসার পরপরই শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। শুরুতেই গঙ্গাজল ছিটিয়ে ‘কুমারী মা’কে পরিপূর্ণ শুদ্ধ করে তোলা হয়। এরপর ‘কুমারী মা’র চরণযুগল ধুয়ে তাকে বিশেষ অর্ঘ্য প্রদান করা হয়। অর্ঘ্যের শঙ্খপাত্র সাজানো হয়েছিল গঙ্গাজল, বেল পাতা, আতপ চাল, চন্দন, পুষ্প ও দূর্বাঘাস দিয়ে।
রাজধানীর অন্যান্য মন্দির ও মণ্ডপে বিপুল উৎসাহ, আনন্দ ও ধর্মীয় আচার মেনে মহাঅষ্টমীর পূজা শেষ হয়েছে। এসব মন্দির ও মণ্ডপে মূল প্রতিমায় পূজা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল পুরান ঢাকার বাংলাদেশ মাঠে হরিজন সম্প্রদায় প্রথমবারের মতো তাদের মণ্ডপে পূজার আয়োজন করেন।
বুধবার ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন রাজধানীর রামসীতা মন্দির, রমনা কালী মন্দিরসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখেন এবং শারদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। গতকাল মন্ত্রি পরিষদের সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ নগরীতে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, রমনা কালী মন্দির ও শ্রী শ্রী মা আনন্দময়ী আশ্রম পরিদর্শন করেন। এছাড়া সূত্রাপুরের রামসীতা মন্দিরে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মন্দিরে গিয়ে পূজা উপলক্ষে দুঃস্থদের হাতে শাড়ি বিতরণ করেন।