নতুন প্রজন্মের দক্ষ পেশাজীবী তৈরির প্রত্যয় নিয়ে দুবাইতে শেষ হয়েছে ‘গ্লোবাল বিজনেস কনফারেন্স- ২০২৩’। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশী প্রবাসীদের সবচেয়ে বৃহৎ সংগঠন এনআরবি ওয়ার্ল্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ম্যাগাজিন বিজনেস আমেরিকা যৌথভাবে এ কনফারেন্সের আয়োজন করে। দুবাইয়ের বিখ্যাত হোটেল মিলেনিয়াম প্লাজা ডাউন টাউনে গত ২২-২৪ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় এই কনফারেন্স।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্টদূত মোহাম্মদ আবু জাফর, গেস্ট অব অনার হিসাবে উপস্থিত ছিলেন এনআরবি ওয়ার্ল্ডের চিফ অ্যাডভাইজার এবং কেপিসি গ্রুপের চেয়ারম্যান অ্যান্ড ফাউন্ডার ড. কালি প্রদীপ চৌধুরি এবং দুবাইয়ের এইচ. ই. ড. জুমা মাদানী, আল মাতিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও । বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, ফয়সাল চৌধুরী, স্কটিশ মেম্বার অব পার্লামেন্টি ও শ্যাডো মিনিস্টার অব কালচার, জর্জিয়া স্টেটের সিনেট শেখ রহমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতেরর বাংলাদেশি কনস্যুলেট জেনারেল বি এম জামাল হোসেন। অনুষ্ঠানে ২৫টি দেশের প্রায় ৫০০ বিশ্বখ্যাত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, তাদের কর্ণধার ও প্রফেশনালসরা উপস্থিত ছিলেন।
গ্লোবাল বিজনেস কনফারেন্স-২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সহবিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশী উদ্যোক্তা ব্যাবসায়ীদের সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তা ব্যক্তিত্বকে ‘ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্র্ড-২০২৩’ প্রদান করা হয়। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা পরস্পর ব্যবসায়ীক সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ লাভ করে এবং এতে করে উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের বিজনেস সংযোগ স্থাপন দ্রুত সম্ভব হবে। এই কনফারেন্স দেশের অর্থনীতি বিকাশের ক্ষেত্রেও এক গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে প্রবাসীদের সহযোগিতা অপরিহার্য। নতুন প্রজন্মকে আমাদের জাতিসত্তা ও শিকড়ের সাথে যোগসূত্র গঠনের লক্ষ্যে এনআরবি ওয়ার্ল্ড এর জন্ম বলে জানান এনআরবি ওয়ার্ল্ডের বর্তমান সভাপতি মো: শহীদুজ্জামান। বর্ণাঢ্য উদ্ধোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় গ্লোবাল বিজনেস কনফারেন্স ২০২৩। শীঘ্রই প্রবাসীদের ন্যায্য দাবি এনআরবি কার্ড প্রদানের প্রত্যয়ে মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুই দিন ব্যাপী গ্লোবাল বিজনেস কনফারেন্স ২০২৩। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন নীল হুরেজাহান।
প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার উপর জোর দিয়ে ড. জুমা মাদানি বলেছেন যে- ইউএই সরকার বাংলাদেশিদের উদ্যোগী ব্যবসায়িকদের সমর্থন করে এবং ব্যবসা প্রসারের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক, এনআরবি ওয়ার্ল্ডের উপদেষ্টা এবং বিজনেস আমেরিকা ম্যাগাজিনের চিফ এডিটর রকেয়া হায়দার বলেন, আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি একে অপরের সাথে যোগাযোগ ও সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। বাংলাদেশীরা প্রথম প্রবাসে আসে জীবিকার জন্য, কিন্তু এখন প্রবাসীরা শিক্ষা ও ব্যবসার ক্ষেত্রে এগিয়ে। প্রতিবছর অনেক নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা বিদেশে পাড়ি জমান তাই এই প্লাটফর্ম হতে পারে তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ চলার স্থান।
এনআরবি ওয়ার্ল্ড-এর সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, প্রবাসী পরবর্তী প্রজন্মকে আমাদের মাতৃভূমির সাথে যোগসূত্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানটির জন্ম। তিনি আরো বলেন, আমরা সংগঠনটির উদ্যোগ নিয়েছি, কিন্তু এগিয়ে নেওয়া দায়িত্ব আমাদের সকলের। দেশ আমাদের অনেক দিয়েছে, আমরা দেশের কাছে ঋণী। এখন আমাদের সময় এসেছে এই ঋণকে শোধ করার। আর তা সম্ভব এনারবি ওয়ার্ল্ড এর সাথে যুক্ত হয়ে। তিনি সরকারের কাছে অবিলম্বে এনআরবি কার্ড প্রদানের প্রয়োজনীয়তা ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেটর শেখ রহমান তার বক্তব্যে বলেন, এখন বিজয়ের মাস, বাংলাদেশ জন্ম না হলে আমিও আজকে ইউএসএ’র সিনেটর হতে পারতাম না। তিনি আরো বলেন, আমাদের উচিত আমাদের নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়া। তবেই তারা আমাদের সবার সাথে যুক্ত হতে পারবে। স্কটিশ পার্লামেন্ট্রিয়ান ফয়সাল চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, স্বপ্নটাকে বড় করে দেখতে হবে তবেই তা আমাদের ধরা দিবে। আমাদের দেশের রাজনীতি প্রবাসে আমাদের বিভক্ত করেছে। আমাদের উচিত আমরা যেখানে বসবাস করি, সেই দেশেরই রাজনীতির সাথে যুক্ত হওয়া, তবেই দেশ উপকৃত হবে।
কোডারস ট্রাস্ট-এর কর্ণধার আজিজ আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। সবাই এগিয়ে আসলেই এনআরবি ওয়ার্ল্ড নামের এই সংগঠনটি এগিয়ে যাবে । সেক্রেটারি জেনেরাল- এনআরবি ওয়ার্ল্ড, মোহাম্মদ আইয়ুব আলী তার বক্তব্যে বলেন, দেশে বৈধ পথে টাকা পাঠাতে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি সুষ্ঠ চ্যানেল তৈরি করতে সরকারকে অনুরোধ জানান। দুবাই সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি ড: ইসমাঈল বোয়ালহাউস বলেন, দুবাই হচ্ছে পৃথিবীর ইনভেস্টমেন্টের রাজধানী। আমাদের সরকার দুবাইতে সবাইকে বিজনেস করতে সহযোগিতা করে থাকে। যে কেউ ইচ্ছে করলেই কম খরচে দুবাইতে বিজনেস শুরু করতে পারেন।
গ্লোবাল বিজনেস কনফারেন্সের প্রথম দিনেই উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভূক্ত করে পাঁচটি প্যানেল আলোচনা হয়েছে।
ড. রুবাইয়াত ইসলাম সাদাত, ন্যাশ ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান, 'ইনোভেশন'-এর উদ্বোধনী প্যানেলের নেতৃত্ব দেন, যেখানে বিকর্ণ কুমার ঘোষ, এফবিসিসিআই ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের সিইও, বশির আহমেদ, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি; রাজুলুর রাসেল, মেডট্রনিকের অপারেশনাল এক্সিলেন্স ম্যানেজার, এশিয়া প্যাসিফিক; আসাদ মামুন, ড্রোন ইন্টারন্যাশনাল সিঙ্গাপুরের সিইও; রুদমিলা নওশীন, সিলিকন ভ্যালিতে কনফিগভিআর এবং কনফিগরোবট-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এবং স্বাধীন ল্যাব -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসানুর রহমান।
এশিয়ান টাইগার্স ক্যাপিটাল পার্টনার্সের চেয়ারম্যান মডারেটর ইফতি ইসলামের নেতৃত্বে দ্বিতীয় প্যানেলে 'ইনবেস্টমেন্ট' সম্পর্কে আলোচনা করে।
‘ইনভেস্টমেন্ট’ সম্পর্কিত আলোচনায় আর্থিক কৌশল, বাজারের প্রবণতা এবং সর্বোত্তম মূলধন বরাদ্দের সুযোগ ইত্যাদি উঠে এসেছে। প্যানেলিস্টরা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, বৈচিত্র্য, এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কারণগুলির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং ব্যবসার জন্য একইভাবে বিচক্ষণ বিনিয়োগ অনুশীলনের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছেন।
প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন টেকনাফের সিইও আতাউল আহমেদ, লিংকথ্রি টেকনোলজিস লিমিটেডের সিইও শেখ রায়হান আহমেদ; রফিক খান, এভিএস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট, চিশতি সিপিএপিসির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ চিশতি এবং এনইসি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও ফারাজি ইকরাম।
জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ শেখ আলিমুজ্জামানের নেতৃত্বে দ্বিতীয় প্যানেল ‘ইনভলভমেন্ট’ সম্পর্কে আলোচনা করে। প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন আবুল হায়াত নুরুজ্জামান, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স ইন্ডাস্ট্রির (বিবিসিসিআই) ডিরেক্টর জেনারেল, তাজ অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং ক্লাউড বিপিও; ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন, স্পেশালাইজড ইন ইউকে অ্যান্ড ইইউ ইমিগ্রেশন; ময়নুল হক সিদ্দিকী, ফাইবার হোম লিমিটেডের চেয়ারম্যান; আবুল হোসেন, ফজিলা গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সিইও; ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির (বিবিসিসিআই)-এর পরিচালক মাহতাব মিয়া এবং জেএসএস সার্ভিসেস লিমিটেডের সিইও মোঃ ফেরদৌস উর রহমান।
ফোবানার সদস্যরা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’-এ অবদান রাখার ক্ষেত্রে সংগঠনের ভূমিকা তুলে ধরে একটি আলোচনার আয়োজন করেন, যেমন ফোবানার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর; ডিউক খান, সাবেক চেয়ারম্যান; রেহান রেজা; এম. মাওলা (দিলু); নাহিদুল খান, ফোবানার আহ্বায়ক; কাজী নাহিদ, সহ-আহ্বায়ক; সদস্য সচিব মাহববুর রহমান ভূঁইয়া ও ফোবানার উপদেষ্টা গোলাম ফারুক ভূঁইয়া।
কনফারেন্সে ডিজিটাল ইন্টেলের প্রতিষ্ঠাতা লিটন বাউলের নেতৃত্বে ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ক একটি প্যানেলও ছিল। ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ক আলোচনায় ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন এবং গতিশীল পেশাদার মাইলফলক এর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
প্যানেলিস্ট দের মধ্যে ছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান সবুর খান; আবু হানিপ, চ্যান্সেলর এবং চেয়ারম্যান, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, এলএন.এম.কে. বাশার, বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান; মোঃ আবু শাহাদাত সরকার, চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা, এইচবিডি গ্রুপ পিটিই লিমিটেড; ডিজিটাল এন্ট্রাপ্র্রেনার হাবের সিইও হেমি হোসেন; মাহিন আবেদীন, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইনারওয়েস্ট প্রপার্টি; মো: মাসুদুর রহমান, স্টাডি পিটিই লিমিটেডের ফাউন্ডার অ্যান্ড ডিরেক্টর এবং মোহাম্মদ কাজী আব্দুল কাদের, ইএসআই গ্লোবাল সার্ভিস পিটিই লিমিটেড-এর ওনার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
এ ধরনের একটি মহতী উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিশ্বব্যাপী উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের অ্যাওয়ার্ড ও সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে অবস্থিত বাংলাদেশী উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের অনুপ্রেরণার একটি অনুপম উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এএ