সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মীর রাশেদ বিন আমানকে নিরাপত্তা দিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। কর্তৃপক্ষের পরিচালক (আইন) মোহা. আবদুল মজিদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠিতে রোববার (১৪ জানুয়ারি) ডিএমপি কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
আইডিআরএ বলছে, সোনালী লাইফের চেয়ারম্যানসহ কতিপয় পরিচালকের সংঘটিত আর্থিক অনিয়ম তদন্তের লক্ষ্যে কোম্পানিটিতে নিরীক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিরীক্ষার প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রকার দলিলাদি সরবরাহ করতে বলা হয়েছে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহীকে। তবে মুখ্য নির্বাহীকে অফিসে প্রবেশ ও তদন্তকাজে সহায়তা প্রদানে বাধা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। যাতে বীমা কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার ও বীমা গ্রহীতার স্বার্থের বিঘ্ন হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দায়িত্ব পালনরত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমান যাতে স্ব-শরীরে তার দপ্তরে প্রবেশপূর্বক প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারে প্রবেশাধিকার পান এবং তার দায়িত্ব পালন চলমানে কেউ কোনরূপ বাধার সৃষ্টি না করতে পারে এ বিষয়ে পুলিশি সহযোগিতা প্রদান করার জন্য অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
এর আগে ১০ জানুয়ারি (বুধবার) সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে মীর রাশেদ বিন আমানের দায়িত্ব পালনে কোনরূপ বাধা সৃষ্টি না করতে বীমা কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদকে নির্দেশ দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । বীমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যানসহ সকল পরিচালককে পাঠানো এক চিঠিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়।
এরপরই শনিবার (১৩ জানুয়ারি) বীমা কোম্পানিটির বোর্ডসভায় মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমানকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে আইডিআরএ থেকে অনুমোদন পেলে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন বীমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস।
ডিএমপিকে পাঠানো চিঠিতে আইডিআরএ যা বলেছে-
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ কতিপয় পরিচালক কর্তৃক সংঘটিত আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করার লক্ষ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনাকালে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মাফিক বিভিন্ন প্রকার দলিলাদি কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক সরবরাহ করার জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পত্রে উল্লেখ রয়েছে। তদন্তাধীন আর্থিক অনিয়মের সাথে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের কতিপয় সদস্য জড়িত থাকায় তারা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে দপ্তরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না এবং এর ফলে তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
এ প্রেক্ষিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (কর্তৃপক্ষের স্মারক নং- ৫৩.০৩.০০০০.০৭১.২৭.০২৯.২৩.০৫; তারিখ: ১০/০১/২০২৪) মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনের জন্য দপ্তরে প্রবেশ ও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারে প্রবেশাধিকার প্রদানের জন্য কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমান লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, তিনি গত ১১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ সকালে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তার দপ্তরে (সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, প্রধান কার্যালয়, রুপালী বীমা ভবন, ৭, রাজউক এভিনিউ এবং বর্ধিত কার্যালয়: ৬৮/বি, ডিআইটি রোড, মালিবাগ, ঢাকা) প্রবেশ করতে গেলে তাকে কোম্পানিতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
অধিকন্তু, স্থানীয় থানায় এ মর্মে অভিযোগ করা হয় যে, তিনি অবৈধভাবে কোম্পানিতে জোর করে প্রবেশ করেছেন। এ প্রেক্ষিতে স্থানীয় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। মুখ্য নির্বাহী কর্মকতাকে অফিসে প্রবেশ ও তদন্তকাজে সহায়তা প্রদানে বাধা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে যাতে বীমা কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার ও বীমা গ্রহীতার স্বার্থের বিঘ্ন হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।
এমতাবস্থায়, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের দায়িত্ব পালনরত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমান যাতে স্বশরীরে তার দপ্তরে প্রবেশপূর্বক প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারে প্রবেশাধিকার পান এবং তার দায়িত্ব পালন চলমানে সহায়তায় কেউ কোনরূপ বাধার সৃষ্টি না করতে পারে এ বিষয়ে পুলিশি সহযোগিতা প্রদান করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এএ