সবুজ এবং মিমের প্রেমের বিয়ে হলেও বিয়ের পর স্বামী ও সংসারের প্রতি চরম উদাসীন ছিল মিম। কারণে অকারণে স্বামীর সঙ্গে তার কলহ লেগেই ছিল। তাই বিয়ের ১১ মাসের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে আশ্রয় নেয় সবুজ।
ঘটনাস্থল কুমিল্লা আদালতের সাবেক পিপি অ্যাড.মজিবুর রহমানের আদালত পাড়ার চেম্বার। সোমবার সন্ধ্যায় স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ মীমাংসার জন্য ডাকা সালিশের এক পর্যায়ে সবুজের স্ত্রীর পক্ষের লোকেরা সবুজকে নির্যাতন ও বাথরুমে নিয়ে মারধর করে জোরপূর্বক মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করে। এমনই অভিযোগ উঠেছে সবুজের পরিবারের পক্ষ থেকে। তাই ছেলে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে নিহতের পরিবার।
স্থানীয় সূত্র ও সালিশ বৈঠকে অংশ নেয়া লোকজন জানান, জেলার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল ইউপির মাধবপুর গ্রামের আবদুল বাকেরের ছেলে মো. সবুজ (২৬) প্রায় ১১ মাস আগে প্রেম করে তার নিকটাত্মীয় জেলার দেবিদ্বার উপজেলার বড়আলমপুর গ্রামের শাহজাহানের মেয়ে ফাহিমা আক্তার মিমকে (২০) বিয়ে করেন। বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ দেখা দেয়। ইতিমধ্যে স্ত্রী মিম ৪ মাসের অন্ত:সত্তা হয়ে পড়লে স্বামী সবুজকে না জানিয়ে সে ক্লিনিকে গিয়ে গর্ভপাত ঘটিয়ে বাচ্চা নষ্ট করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সবুজ তার স্ত্রী মিমকে মারধর করে। এ নিয়ে স্ত্রী মিম নারী নির্যাতনের মামলা করার প্রস্তুতি নিলে উভয় পক্ষের স্বজনরা কুমিল্লা বারের সাবেক পিপি অ্যাড. মজিবুর রহমানের শরানাপন্ন হয়। সোমবার বিকেলে উভয় পক্ষের লোকেরা মুজিবুর রহমানের বাসায় শালিসি বৈঠকে বসেন। এ বিষয়ে সবুজের চাচা সুলতান আহম্মদ জানান, মাগরিবের আযান হলে বৈঠকের অনেকেই নামাজে চলে যায়। এসময় সবুজের স্ত্রীর মামা আরমানসহ তার সহযোগীরা তাকে মারধর করে বাথরুমে নিয়ে জোরপূর্বক বিষ খাইয়ে দেয়। এতে তার আর্তচিৎকারে লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর রাতে মৃত্যু হয়।
সালিস বৈঠকে অংশ নেয়া বুড়িচংয়ের সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবদুল করিম জানান, মেয়ের পক্ষের লোকজনের নির্মম নির্যাতন ও জোরপূর্বক বিষ খাইয়ে দেয়ার কারণেই সবুজের মৃত্যু হয়েছে।
সবুজের মা আনোয়ারা বেগম জানান, আমার ছেলেকে যখন নির্যাতন করা হচ্ছিল তখন সে মোবাইল ফোনে কুমিল্লা শহরের তার বন্ধু জাবেদকে বিষয়টি জানিয়ে সহযোগিতা চেয়েছিল। তখন জাবেদ লোকজন নিয়ে এসে ভেতর থেকে গেট আটকানো বাড়ির বাথরুম থেকে সবুজকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নেয়ার পথেও সে জীবিত ছিল এবং তাকে যারা নির্যাতন করে বিষ খাইয়েছে তাদের নাম প্রকাশ করেছে।
কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শামসুজ্জামান জানান, দাম্পত্য কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগ সবুজকে নির্যাতনে হত্যা করে মুখে বিষ ঢেলে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নিহতের পরিবারের অভিযোগ খতিয়ে দেয়া হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। মানবকণ্ঠ