চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষায় ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এসংক্রান্ত এক রিট আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনতাসীর উদ্দিন আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আইনজীবী মুনতাসীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত ১০ জানুয়ারি সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। সেখানে ২ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি এমবিএস ও বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা।
হাইকোর্টের এ আদেশের ফলে অনুষ্ঠেয় এ ভর্তি পরীক্ষায় ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ করতে হবে।’
দেশের সরকারি-বেসরকারি সব মেডিক্যাল কলেজে এমবিএস ও বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণে হাইকোর্টের বহাল রেখে ২০১৫ সালে ১২ রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এ রায়ের পর আট বছর পেরিয়ে গেলেও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবরই ২ শতাংশ কোটা রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল চলতি বছর যে ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করেছে সেখানেও ২ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষার প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং ২০০৮ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জারি নির্দশনা অনুসরণ করে যাতে মেডিক্যাল ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশনা জারি করতে অনুরোধ করা হয় আবেদনে। এ আবেদনের পর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় গত বছর ১৯ জুন এবং গত ২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। চিঠি দেওয়ার পরও এমবিবিএস ও বিডিএসি কোর্সের ভর্তি নীতিমালা এবং ভর্তি বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুসরণ করা হয়নি। এর মধ্যে গত বছর ২৮ ডিসেম্বর ‘মেডিক্যাল কলেজ এবং ডেন্টাল কলেজ/ইউনিটে এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২৪’ প্রকাশ করে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল।
এ নীতিমালা প্রকাশের পর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দেন রিট আবেদনকারী তুষার। চিঠিতে আপিল বিভাগের রায় অনুসরণ করে এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু গত ১০ জানুয়ারি স্বাস্ত্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, তাতে আগের মত ২ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়। এরপর নীতিমালা এবং ভর্তি বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। শুনানির পর রুলসহ আদেশ দিলেন উচ্চ আদালত।
৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ না করে গত বছর ২৮ ডিসেম্বর নীতিমালা প্রকাশ এবং গত ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। সেই সঙ্গে নীতিমালা এবং ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এএ