মিসরের নিয়ন্ত্রণে থাকা সুয়েজ খাল এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে পণ্য বাণিজ্যের সবচেয়ে দ্রুততম পথ। পণ্যের বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশই হয় লোহিত সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত খালটি দিয়ে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে লোহিত সাগরে চলমান সংঘাতের প্রভাবে জলপথটি দিয়ে পণ্যের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
গত বছরের শেষ দিকে লোহিত সাগরে পণ্যবাহী একটি জাহাজে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। তখন থেকেই লোহিত সাগরে সংঘাত চলছে। এ সংঘাতে সম্প্রতি সরাসরি জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একের পর এক হামলা-পাল্টা হামলায় বাণিজ্যিক রুটটি দিয়ে সিংহভাগ পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিকল্প হিসেবে এসব জাহাজকে পাড়ি দিতে হচ্ছে লম্বা পথ। লোহিত সাগর রুটে পণ্য পরিবহনকারী জাহাজগুলোকে এখন ইউরোপে যাতায়াত করতে হচ্ছে গোটা আফ্রিকার দক্ষিণ ভারত মহাসাগর ও দক্ষিণ আটলান্টিক উপকূল ঘুরে। এতে ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ ও সময়। ফলে ফের অস্থিতিশীলতার মুখে পড়েছে বৈশ্বিক পণ্যবাজার।
জাহাজের তথ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এএক্সএসমেরিন জানায়, ১৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া সপ্তাহে সুয়েজ খাল পাড়ি দেয়া ট্যাংকারের সংখ্যা আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। ফ্রেইট প্লাটফর্ম জেনেটা জানায়, চলমান সংঘাতে ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে সমুদ্রপথে জাহাজ ভাড়ার পরিমাণ আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত তেমনটাই ইঙ্গিত করছে।
এ বিষয়ে জেনেটার দেয়া তথ্য বলছে, দূরপ্রাচ্য থেকে উত্তর ইউরোপে পণ্য পরিবহনে জাহাজ ভাড়া বাড়তে পারে প্রায় ৮ শতাংশ। ৪০ ফুটের একটি কনটেইনারে পণ্য পরিবহনে গড় ভাড়া দাঁড়াতে পারে ৫ হাজার ১০৬ ডলারে, যা গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের তুলনায় ২৩৫ শতাংশ বেশি।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্লাটসের দেয়া তথ্যমতে, সমগ্র ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোয় পণ্য আমদানিতে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ অবদান রয়েছে সুয়েজ খাল রুটের। হুথি বিদ্রোহীদের হামলা থেকে বাঁচতে অনেক শিপিং কোম্পানি লোহিত সাগর এড়িয়ে চলছে।
লোহিত সাগরের এ সংঘাতের ফলে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর সঙ্গে হুথিদের পৃষ্ঠপোষকতার দায়ে অভিযুক্ত ইরানের উত্তেজনাও এখন বাড়ছে। এতে পারস্য উপসাগরের হরমুজ প্রণালি দিয়েও পণ্য পরিবহন অব্যাহত রাখা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। লোহিত সাগরের পর হরমুজ প্রণালি দিয়ে পণ্য পরিবহন বন্ধ হলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সত্তরের জ্বালানি সংকট বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চেয়েও দ্বিগুণ-তিন গুণ প্রভাব ফেলবে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে হুথিদের সঙ্গে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাত গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষত তৈরি করতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা পর্যবেক্ষকদের।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এসব সংঘাতের কারণে বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলসহ প্রধান প্রধান পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। অতিরিক্ত জাহাজ ভাড়ার প্রভাবে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। লোহিত সাগরে সংঘাত আরো তীব্র হলে বিশ্ব অর্থনীতি ফের বড় ধরনের মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
এনজে