দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড ওয়ালটন এবার ফ্রিজ বিক্রিতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। চলতি বছর তাদের টার্গেট বাংলাদেশের বাজারে ১৫ লাখ ফ্রিজ বিক্রির। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ফ্রিজ।
উল্লেখ্য, ওয়ালটন কারখানায় ফ্রিজের উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ছয় থেকে ৭ হাজার ফ্রিজ। ওয়ালটন ফ্রিজের কম্প্রেসারে যুক্ত হয়েছে ‘ইন্টিলিজেন্ট ইনভার্টার’। এতে ক্রেতারা ব্যাপক সন্তুুষ্ট। ন্যানো পার্টিকেল এবং আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে ওয়ালটন দেশেই তৈরি করছে বিশ্বমানের ফ্রিজ। সবমিলিয়ে বাজারে ব্যাপক চাহিদা আশান্বিত করেছে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষকে।
ওয়ালটন সূত্রমতে, গত বছর ৯ লাখ ৬০ হাজার ফ্রিজ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বছর শেষে ৯ লাখ ৬৫ হাজার ফ্রিজ বিক্রি হয়। যা ২০১৪ সালের তুলনায় ২১.৩৮ শতাংশ বেশি। চলতি বছর ১.৫ মিলিয়ন বা ১৫ লাখ ফ্রিজ বিক্রির টার্গেট নিয়েছে ওয়ালটন। গত রোজার মাসে প্রায় ২ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে। আগামি কোরবানীর ঈদে এর দ্বিগুণেরও বেশি ফ্রিজ বিক্রির আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
এবছর এতো বেশি সংখ্যক ফ্রিজ বিক্রি কীভাবে হবে? এবিষয়ে কিছু যুক্তি তুলে ধরেছেন ওয়ালটনের অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম। তিনি জানান, সম্প্রতি ওয়ালটন ফ্রিজে যুক্ত হয়েছে ব্যাপক বিদ্যুত সাশ্রয়ী এবং বিশ্বের সর্বশেষ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ইন্টিলিজেন্ট ইনভার্টার। যার ফলে দেশ-বিদেশের বাজারে ওয়ালটন ফ্রিজের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।
এছাড়া ব্যাচেলর, ছোট ফ্যামিলি, অফিস, ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং হোটেলে ব্যবহার উপযোগী ছোট ফ্রিজ উৎপাদন শুরু করেছে ওয়ালটন। খুব শিগগীরই তা বাজারে আসছে। দাম কম বলে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া দেশের বিদ্যুত পরিস্থিতির প্রভূত উন্নতির ফলে ইলেকট্রিক্যাল পণ্যের বিক্রি বাড়বে। সেইসঙ্গে দেশের মানুষের আয় বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং সর্বোপরি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি আশা যোগাচ্ছে।
সূত্রমতে, চলতি বছরের শুরু থেকেই ফ্রিজ বিক্রি তুলনামূলক বেশি হচ্ছে। প্রতিমাসেই নতুন নতুন প্রযুক্তি ও মডেলের আকর্ষণীয় কালারের ফ্রিজ বাজারে ছাড়া হচ্ছে। সম্ভাবনাময় ব্ল্যাংক পয়েন্টগুলোতে চালু হচ্ছে ওয়ালটন প্লাজা। নতুন পরিবেশক নিয়োগের মাধ্যমে বাড়ানো হচ্ছে সেলস পয়েন্ট। নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে রপ্তানি ও দেশের বাজারের জন্য আলাদা উৎপাদন ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে।
চলতি বছর ইনভার্টার প্রযুক্তির উচ্চমানের বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় মডেলের নো-ফ্রস্ট ফ্রিজ বাজারে ছেড়েছে ওয়ালটন। এগুলো হচ্ছে ৩২৩, ৩৪৮, ৩৮৬, ৩৯৬, ৪৩০, ৫১২, ৫২৬ ও ৫৮৫ লিটার ধারণক্ষমতার ফ্রিজ। এগুলোর মধ্যে তিন দরজা বিশিষ্ট ৫২৬ লিটারের নো-ফ্রস্ট ফ্রিজটি বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ইনভার্টার প্রযুক্তির আরো কয়েকটি মডেলের নো-ফ্রস্ট ফ্রিজ বাজারে আসছে। ইউরোপ ও আমেরিকার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী তৈরি ইনভার্টার প্রযুক্তির এই ফ্রিজগুলো সাধারণ ফ্রিজের তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
এবছর ওয়ালটনের আরেকটি নতুন চমক হলো ১২৫ ও ১১০ লিটারের এক দরজা বিশিষ্ট ফ্রস্ট ফ্রিজ। যা খুব শিগগীরই বাজারে আসছে। প্রধানত ব্যাচেলর, ছোট ফ্যামিলি, অফিস ও হোটেল কক্ষের জন্য এই ফ্রিজ বেশ উপযোগী।
গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে দক্ষ প্রকৌশলী, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ এর সমন্বয়ে ৭৭ টি মডেলের ফ্রস্ট ও নো-ফ্রস্ট ফ্রিজ উৎপাদন হচ্ছে। সাশ্রয়ী মূল্য, আন্তর্জাতিক মান, বৈচিত্র্যময় মডেল ও কালার, ছয় মাসের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি, কম্প্রেসারে ১০ বছরের গ্যারান্টি, সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা এবং সর্বোপরি দেশব্যাপী বিস্তৃত সেলস ও সার্ভিস পয়েন্ট থাকায় গ্রাহকদের পছন্দের শীর্ষে এখন ওয়ালটন।
ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান এমদাদুল হক সরকার বলেন, এবছর আমাদের লক্ষ্য ফ্রিজ বিক্রিতে নতুন রেকর্ড করা। তিনি জানান, বছরের প্রথম ছয় মাসে যে পরিমান বিক্রি হয়েছে তাতে বলা চলে মোট বিক্রি লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তার মতে, এখন ফ্রিজ বিক্রির মৌসুম। আগামি কোরবানীর ঈদে বিক্রি অনেক বাড়বে।
দেশের ফ্রিজ বাজারে বিগত কয়েক বছর ধরেই বিশাল ব্যবধানে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ওয়ালটন। এখন ওয়ালটনের টার্গেট বিশ্ব বাজারেও দ্রুত প্রতিষ্ঠা লাভ। ওয়ালটন স্থাপন করেছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় হাইটেক প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র। যেখানে কাজ করছেন দেশ-বিদেশের দক্ষ প্রকৌশলী ও গবেষক। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি ও পণ্যের মানোন্নয়ন এবং মূল্য সাশ্রয়ী পণ্য তৈরির লক্ষ্যে গবেষণা করছেন তারা। এছাড়া প্রযুক্তি পণ্যের বেশিরভাগ কাঁচামালও নিজেরাই তৈরি করছে। বিশেষ করে ফ্রিজ শ্রমঘণ শিল্প বলে উন্নত বিশ্বে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে এ শিল্প থেকে সরেও যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে শ্রমের মূল্য কম হওয়ায় এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে দেশ এগিয়ে যাওয়ায় ওয়ালটনের সামনে বিশ্ববাজারে স্থান করে নেয়ার বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ওয়ালটনের প্রকৌশলী আল ইমরান জানান, বাংলাদেশে একমাত্র ওয়ালটন ফ্রিজই আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী ‘নাসদাৎ’ টেস্টিং ল্যাবে মান যাচাই করে বাজারজাত হচ্ছে। এই টেস্টিং ল্যাব বিএবি এবং আইলাক অনুমোদিত।
জানা গেছে, দেশে একমাত্র ওয়ালটনেরই রয়েছে আইএসও সনদ প্রাপ্ত সার্ভিস সেন্টার। এর আওতায় সারাদেশে প্রায় ৭০টি সার্ভিস সেন্টার ও ৩০০ টিরও বেশি সার্ভিস পয়েন্টের মাধ্যমে গ্রাহকদের সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা দিচ্ছেন প্রায় আড়াই হাজার অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ান। প্রতিনিয়ত বাড়ানো হচ্ছে সার্ভিস পয়েন্ট। ওয়ালটন এখন শুধু পণ্য নয়, সেবাও বিক্রি করছে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস