রেকর্ড দামে ভারতীয় চাল রফতানি

সানবিডি২৪ প্রকাশ: ২০২৪-০২-১৮ ১৫:২৮:৫৯


এশিয়ার বাজারে চলতি সপ্তাহে চালের দামে মিশ্র প্রবণতা লক্ষনীয়। এর মধ্যে ভারতীয় চালের রফতানি মূল্য আগের সপ্তাহের মতোই রেকর্ড উচ্চতায় অবস্থান করছে। তবে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে শস্যটির দাম কমেছে। খবর বিজনেস রেকর্ডার।

বর্তমানে ‍ভারত বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক। আফ্রিকার দেশগুলোয় দেশটির চালের চাহিদা কমার পর দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। অর্থাৎ গত সপ্তাহের মতোই রেকর্ড দামে চাল রফতানি করছে ভারত। চলতি সপ্তাহে প্রতি টন ভারতীয় ৫ শতাংশ ভাঙা সেদ্ধ চালের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫৪২-৫৫০ ডলারে। এর পেছনে সীমিত সরবরাহকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে মুম্বাইভিত্তিক রফতানিকারকরা জানান, চালের দাম বাড়ার কারণে আফ্রিকার ক্রেতারা চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ব্যয়ের চাপ সামলাতে না পেরে তারা সম্প্রতি আমদানির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।

রফতানিকারকরা জানান, বর্তমানে নতুন মৌসুমের ধান ভাঙানোর কার্যক্রম চলছে। কিন্তু সরবরাহ সীমিত। কারণ সরকার বেশি দাম দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে চাল কিনছে। সরকারের কাছ থেকে দাম বেশি পাওয়ায় রফতানিকারকদের কাছে চাল বিক্রির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন তারা।

বাজার অস্থিতিশীলতা মোকাবেলায় দেশটির সরকার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চাল রফতানিতে নিরুৎসাহিত করছে। আরোপ করা হয়েছে শুল্কসহ নানা ধরনের নীতিগত প্রতিবন্ধকতা। এ কারণে লম্বা সময় ধরেই দেশটির চালের রফতানি মূল্য ঊর্ধ্বমুখী।

চাল রফতানিতে ভারতের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। রফতানিতে ভারত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করায় অনেক ক্রেতা পাকিস্তানি চালের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে চলতি অর্থবছর দেশটির রফতানি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে পাকিস্তান ১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে চাল রফতানি করছে।

এদিকে ভিয়েতনাম চলতি সপ্তাহে প্রতি টন ৫ শতাংশ ভাঙা চাল ৬৩৭-৬৪০ ডলারে রফতানি করছে। গত সপ্তাহে রফতানি মূল্য ছিল ৬৪০ ডলার। নতুন চন্দ্রবর্ষের সপ্তাহব্যাপী ছুটি শেষে দেশটির চাল বাণিজ্য ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। মেকং ডেল্টাভিত্তিক ব্যবসায়ীরা জানান, ছুটি শেষে চালের কেনা-বেচা দুটোই বেড়েছে।

চলতি সপ্তাহে থাইল্যান্ড প্রতি টন ৫ শতাংশ ভাঙা চাল রফতানি করছে ৬১০ ডলারে। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি টনে দাম কমেছে ২০ ডলার। মূলত দেশটির মুদ্রা বাথের বিনিময় হার কমে যাওয়ায় চালের দামে নিম্নমুখী প্রবণতা তৈরি হয়েছে।

ব্যাংককভিত্তিক ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে চালের বাজার নিম্নমুখী চাপের মধ্যে রয়েছে। তাছাড়া থাইল্যান্ড ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত নিলামেও অংশ নেয়নি। পাশাপাশি আগামী মাস থেকে বাজার অব্যাহত বাড়বে চালের নতুন সরবরাহ। চাহিদা অনেক কম থাকায় থাই চালের দাম কমছে। আগামী মাসগুলোয়ও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

২০২২-২৩ মৌসুমে ঘুরে দাঁড়িয়েছে থাইল্যান্ডের চাল রফতানি। শক্তিশালী সরবরাহ ও প্রতিযোগিতামূলক দাম রফতানি প্রবৃদ্ধিতে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের (এফএএস) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়, ২০২২-২৩ মৌসুমে থাইল্যান্ড ৮৮ লাখ টন চাল বিভিন্ন দেশে রফতানি করে। ২০২১-২২ মৌসুমের তুলনায় রফতানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। তবে ২০২৩-২৪ মৌসুমে রফতানি ৮০ লাখ টনে নেমে আসতে পারে। কারণ ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় রফতানিযোগ্য চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।

এফএএসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ মৌসুমের থাইল্যান্ডে ১ কোটি ৯৯ লাখ টন চাল উৎপাদন হতে পারে। ২০২২-২৩ মৌসুমের তুলনায় উৎপাদন ৫ শতাংশ কমার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যাজনিত ক্ষয়ক্ষতি ও শুষ্ক আবহাওয়া উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিল বা আইজিসি সম্প্রতি চালের বৈশ্বিক উৎপাদন কমতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ফলে এ বছরের বড় একটি সময়জুড়ে চালের বৈশ্বিক দামও ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে।

সর্বশেষ প্রতিবেদনে আইজিসি জানায়, চলতি মৌসুমে বিশ্বজুড়ে ৫১ কোটি ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতে পারে, যা আগের পূর্বাভাস ও গত মৌসুমের তুলনায় কম। এটির বৈশ্বিক বাণিজ্য কমে নামতে পারে পাঁচ কোটি টনে। এছাড়া ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৫১ কোটি ৬০ লাখ টনে।

এনজে