একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় পুঁজিবাজারকে। অর্থনীতির অগ্রগতির ধারাকেও তরান্বিত করে পুঁজিবাজার। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের চিত্র ভিন্ন রকম। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে গেলেও পুঁজিবাজার তার তুলনায় অনেক দূর্বল। পুঁজিবাজারের অগ্রগতি না হওয়ার পেছনে দায়ী করা হয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনকে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ঘন ঘন সিদ্ধান্তের কারণে আতঙ্ক বিরাজ করছে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তারা মনে করেন, বিএসইসি বা ডিএসই যে কোন সময় যে কোন সিদ্ধান্ত দিয়ে টাকা আটকে দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তারা ফ্লোর প্রাইস এবং সাম্প্রতিক সময়ে জেড ক্যাটাগরির সিদ্ধান্ত সামনে নিয়ে এসেছেন।
তাদের মতে, ফ্লোর প্রাইস এবং জেড ক্যাটাগরির বিষয়ে কোন ধরণের বিবেচনা না করেই একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি সার্কুলার দিয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যে আবার তা পরিবর্তন করেছে। দুইদিন পরে আবারও ২২টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে দিয়েছে। এর পর নিয়ন্ত্রক সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়, নতুন করে আর কোন কোম্পানি জেড ক্যাটাগরিতে যাবে না। এর দুই দিন পরই আবার ছয়টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানো হয়েছে। তাদের মতে এই কাজগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা সুক্ষভাবে একবারেই করতে পারতো।
বারবার এমন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে পুরো পুঁজিবাজারে। ডিএসই সূত্র মতে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত পুঁজিবাজারের সূচক কমেছে ২৭১ দশমিক ৮২ পয়েন্ট। আর গত ৪ ফেব্রয়ারি থেকে চলতি ৪ মার্চ পর্যন্ত বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। সর্বশেষ ডিএসই হাজার কোটি টাকা লেনদেনের মুখ দেখেছিল গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। এরপর থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটির ঘর স্পর্শ করতে পারেনি।
কামরুল হাসান নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে ঘন ঘন সার্কুলার না দিয়ে যা করা একবারে করলে ভালো হয়। এতে করে আমারা উপকৃত হবো। তা না হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হই।
এ বিষয়র ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বিএসইসি পুঁজিবাজারের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিবে এটাই স্বাভাবিক। অনেক দিন পর বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলো, এই মুহুর্তে জেড ক্যাটাগরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিলেও হতো। তবে আমি বিনিয়োগকারীদের বলবো আতঙ্কিত না হয়ে বুঝে শুনে বিনিয়োগ করেন।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘যখন দেশের অর্থনীতি ভালো ছিল তখন পুঁজিবাজারের অবস্থা খারাপ ছিল। আর এখন তো দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। এখন পুঁজিবাজারের অবস্থা খারাপ যাবে এটাই স্বাভাবিক।’
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে নিয়ন্ত্রক ঘন ঘন সিদ্ধান্ত না নিয়ে যা করার একবারে নিলে ভালো হয়।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ৩৯ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট কমেছে। বর্তমানে সূচকটি অবস্থান করছে ৬ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে। এই সূচক গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে। সেদিন এই সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে, আর তা কমে গতকাল দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে।
ডিএসইর অপর সূচক ডিএসইএস ৫ দশমিক ২৫ পয়েন্ট কমে ১৩৪৪ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক ৫ দশমিক ৪২ পয়েন্ট কমে ২১০৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন ডিএসইতে ৭৯৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিলো ৯৮১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
সোমবার ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৫টি কোম্পানির, বিপরীতে ২১৪ কোম্পানির দর কমেছে। আর ৬৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এজিএম করতে ব্যর্থ, ৬ মাসের বেশি সময় উৎপাদন বন্ধসহ বেশকিছু কারণে গত রোববার ৬ কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর আগে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২২ কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করে বিএসইসি।
অপরদিকে গত রোববার ফ্লোর প্রাইস ওঠে বড় মূলধনী কোম্পানি গ্রামীনফোনের । আর গতকাল সোমবার ওঠে বিএটিবিসির। ফ্লোর প্রাইস ওঠায় কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রির চাপ ছিল। দুই ধাক্কায় পুঁজিাবাজরে সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি দর কমেছে ২১৪ কোম্পানির । লেনদেনও গত দিনের থেকে কমেছে যা গত সাত কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন।