বেঁধে দেয়া দামে মিলছে না নিত্যপণ্য
সানবিডি২৪ প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৪-০৩-১৬ ২১:৫১:২৮
রমজান মাসে বাজারে অস্থিরতা কমাতে শুক্রবার (১৫ মার্চ) পেঁয়াজ, ছোলা, ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংসসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয় সরকার। তবে সেই বেঁধে দেয়া দামের কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। ফলে ক্রেতারাও হতাশ বাজার অব্যবস্থাপনায়।
শনিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হলেও তা নিশ্চিত করতে সরকারের কোনো সংস্থার তদারকি চোখে পড়েনি বাজারগুলোতে। ফলে আগের চড়া মূল্যেই পণ্য কিনতে বাধ্য হন সাধারণ মানুষ।
বেঁধে দেওয়া দাম অনুসারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৬৪ টাকার মধ্যে হওয়ার কথা। শনিবার বিকেলে রামপুরা বাজারে গরুর মাংস ৭৫০ টাকায়ই বিক্রি করতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে হাজী মাংস বিতানের সালাম মিয়া বলেন, কে দাম ঠিক করে দিয়েছে? কিছু জানি না। সমিতি থেকেও আমাদের কিছু জানানো হয়নি। প্রতি বছর রোজার আগে মাংসের দাম সিটি করপোরেশন থেকে বেঁধে দিতো। এবার সেটাও দেয়নি। তাই যে যার মতো করে বিক্রি করছেন।
ওই মাংসের দোকানের পাশেই মুরগির দোকান। সেখানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। যেখানে বেঁধে দেওয়া দাম ব্রয়লারের ১৭৫ ও সোনালি মুরগির ২৬২ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুরগি বিক্রেতা এনামুল বলেন, দাম বেঁধে দিলে কি হবে। আমরা তো মুরগি ঘর থেকে এনে বিক্রি করছি না। আগে আড়তে দাম কমান, তারপর খুচরায় এমনিতে কমে আসবে।
যদিও নতুন এ দাম তিনটি স্তরে নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। একটি পণ্য উৎপাদক পর্যায়ে সর্বোচ্চ দাম, পাইকারি বাজারে এবং ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে, কারওয়ান বাজারে সবজি, মাছ-মাংসসহ অন্য পণ্যের পাইকারি বাজারেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ নির্দেশনার কোনো প্রভাব পড়েনি। বাজারে সব পণ্যের দাম আগের মতোই চড়া। মাছের মধ্যে চাষের পাঙাশের খুচরা দাম ১৮১ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি।
কারওয়ান বাজারের এক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, সরকার এমন একসময় খেজুরের দাম নির্ধারণ করেছে, যখন রমজান শুরু হয়ে গেছে। তাতে বাজারে বেঁধে দেওয়া দামের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম।
রমজান উপলক্ষে মাছ-মাংসসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ দাম অনুযায়ী পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করতে কাজ করবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কৃষি বিপণন আইন ২০১৮ এর ৪ (ঝ) ধারার ক্ষমতা বলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কৃষি পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিম্নোক্ত দামে কৃষিপণ্য বেচাকেনার অনুরোধ করা হলো।
বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, পাইকারি বাজারে ছোলার দাম সর্বোচ্চ সাড়ে ৯৩ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৯৮ টাকা দরে বিক্রি করা যাবে। মসুর ডাল খুচরা পর্যায়ে ১৩০ টাকা ৫০ পয়সা এবং মোটা দানার মসুর বিক্রি হবে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সায়। খেসারি ডালের খুচরায় সর্বোচ্চ দাম হবে ৯৩ টাকা। এছাড়া মাসকলাই ১৬৬ টাকা ৫০ পয়সা এবং মুগডাল খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ১৬৫ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে শনিবার মুদি দোকানে প্রতি কেজি ছোলা ১২ টাকা, মসুর ডাল ১০ টাকা, খেসারি ১৭ টাকা বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এছাড়া প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ টাকা, যা এখন বাজারে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুন ১২০ টাকা ও আদা ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও কিনতে হচ্ছে যথাক্রমে ৪০ টাকা ও ২০ টাকা বেশিতে। তবে বাজার নিম্নমুখী থাকায় কাঁচামরিচ ৬০ টাকায় খুচরা বাজারে কিনতে পারছেন ক্রেতারা। কোনো কোনো দোকানে ২৫০ গ্রাম ২০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ও শিম ৫০ টাকা ও আলু সাড়ে ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ২৪ টাকা খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি। তবে ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৪০ এবং বেগুন ও শিম ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি কেজি জাহেদি খেজুর (বাংলা খেজুর) ১৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও এ নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল। সে সময় খুচরা বাজারে অতি সাধারণ ও নিম্নমানের খেজুরের কেজিপ্রতি দাম হবে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং বহুল ব্যবহৃত জাহেদি খেজুরের প্রতি কেজির দাম ১৭০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে থাকতে হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেয় সংস্থাটি। তবে, বাজারে এখনো ২৫০ টাকার নিচে কোনো সাধারণ খেজুর মিলছে না। জাহেদি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা দরে।
এছাড়া সাগর কলার হালি খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া চিড়ার খুচরা দাম ৬০ টাকা, বেসন ১২১ টাকা বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
এএ