ছুরি, কাঁটা, ফরসেপ, ট্রে ছাড়াই বাইপাস সার্জারি! অপারেশন থিয়েটারের বাইরে আর উত্তেজনায় প্রহর গুণতে হবে না। দাঁতে নখ কাটতে হবে না টেনশনে। কারণ, আমার-আপনার, আত্মীয়-পরিজনদের বুকে আর কাটাছেঁড়া করতে হবে না। সার্জারির জন্য আর অ্যাপ্রন পরতে হবে না ডাক্তার, নার্সদের। বাইপাস সার্জারি হয়ে যাবে! নিশ্চিন্তে, এক রকম নিখরচায়। প্রায় চোখের পলকেই।
আর সেই বাইপাসটা নিঃশব্দে যে করবে, সেই ‘সার্জেন’-এর নাম কী জানেন? ‘এজিজিএফ-ওয়ান’। আদ্যোপান্ত ‘জিরো জিরো সেভেন’-এর ঢঙে অপারেশন চালানো সেই ‘জেমস বন্ড’ আদতে একটা প্রোটিন। যা শরীরে নতুন নতুন তরতাজা ধমনী জন্মাতে সাহায্য করে। যে ধমনীগুলিতে রক্ত বয়ে চলার সময় বাধা পায় বলে হার্টে রক্ত পৌঁছতে পারে না আর তার ফলে অক্সিজেন পৌঁছতে পারে না হার্টের কোষ, কলাগুলোয়, ওই ‘জেমস বন্ড’ প্রোটিন তার তাক লাগানো ‘বুদ্ধিমত্তা’ দিয়ে সেই ‘বুড়োটে’ হয়ে বা ক্ষয়ে যাওয়া ধমনীগুলোকে খুব দ্রুত সরিয়ে ফেলতে পারে।
বলা ভাল, সেই ‘অপদার্থ’ ধমনীগুলোকে তাদের কাজ থেকে ‘বসিয়ে দিতে পারে’। যেমন, ঠিকমতো কাজ করতে না-পারলে অফিসে কোনও কর্মীকে বসিয়ে দেওয়া হয়! আর যার কাজ নেই, তার সাজও নেই! বিবর্তনের স্বাভাবিক নিয়মেই অকেজো ধমনীগুলো ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কিন্তু ধুরন্ধর প্রোটিন ‘এজিজিএফ-ওয়ান’ তো তার অনেক আগেই বানিয়ে ফেলেছে নতুন নতুন তরতাজা ধমনী। যার মধ্যে দিয়ে বাধাহীন ভাবে ঝোড়ো গতিতে রক্ত বয়ে চলতে পারে। অনায়াসে তা পৌঁছতে পারে হার্ট পর্যন্ত। আর হার্টের কোষ, কলাগুলো যে-রক্ত থেকে অবলীলায় শুষে নিতে পারে তার ‘শ্বাসের বাতাস’- অক্সিজেন।
তা হলে আর অপারেশন থিয়েটারে ‘সার্জারি’র দরকার হবে কেন? বাইপাস সার্জারিটা তো নীরবে, নিঃশব্দে করেই ফেলল ‘জেমস বন্ড’ প্রোটিন ‘এজিজিএফ-ওয়ান’।
গল্পকথা নয়। কোনও কল্পকাহিনী নয়। সাড়াজাগানো ওই আবিষ্কারের খবরটি ছাপা হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘প্লস বায়োলজি’র ১১ অগস্ট সংখ্যায়। মূল গবেষকদের মধ্যে রয়েছেন এক বাঙালি। আমেরিকার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের জীববিজ্ঞানী সংযুক্তা রায়বর্মণ।
‘অ্যাঞ্জিওজেনিক ফ্যাক্টর এজিজিএফ-ওয়ান অ্যাক্টিভেটস অটোফ্যাগি উইথ অ্যান এসেন্সিয়াল রোল ইন থেরাপিউটিক অ্যাঞ্জিওজেনেসিস ফর হার্ট ডিজিজ’ শীর্ষক ওই গবেষণাপত্রে চিনের হুয়াঝঙ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যার অধ্যাপক শিং কেনেথ ওয়াং লিখেছেন, ‘‘আমরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখেছি, ওই প্রোটিন তাদের হৃদরোগ কমিয়ে দিচ্ছে, সারিয়ে দিচ্ছে।’’
এই ধুরন্ধর প্রোটিন সেটা কী ভাবে করছে, জানতে হলে দু’টি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া আমাদের একটু বুঝে নিতে হবে।
একটির নাম- ‘অ্যাঞ্জিওজেনেসিস’। যে ভাবে শরীরে নতুন নতুন তরতাজা ধমনী বা শিরার জন্ম হয়। ‘এজিজিএফ-ওয়ান’ সেই ধুরন্ধর প্রোটিন, যা এই প্রক্রিয়াটির গতি বাড়িয়ে দেয়। মানে, ওই প্রোটিন প্রয়োগ করা হলে বা তার মাত্রা বাড়ানো হলে শরীরে আরও বেশি করে, আরও দ্রুত নতুন নতুন তরতাজা ধমনীর জন্ম হয়।
সানবিডি/ঢাকা/আহো