ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত লালমনিরহাটে!
আপডেট: ২০১৫-১০-২২ ১৯:০২:৩১
মসজিদে আজানের ধ্বনি কানে শোনা যাচ্ছে তাই পূজা-অর্চণা বন্ধ। দলে দলে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করছেন। কিছুক্ষণ পর শুরু হবে যোহরের নামাজের জামাত। পাশেই অবস্থিত মন্দিরে ঢোল-তবলা ও পূজার সামগ্রী নিয়ে অপেক্ষা করছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ।
বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় শহরের পুরান বাজারের একই স্থানে অবস্থিত মসজিদ-মন্দিরে গিয়ে দেখা যায় এই চিত্র। একই স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মন্দিরে তাদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা পালন করছে এবং পাশেই অবস্থিত মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আদায় করছে নামাজ। ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য নির্দশন স্থাপন হলো লালমনিরহাটে একই স্থানে অবস্থিত এই মসজিদ-মন্দিরে।
জানা গেছে, ১৮৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা হয় মন্দির। এর ৫ বছর পর একই স্থানে ১৯০০ সালে প্রতিষ্ঠা হয় মসজিদটি। ১১৫ বছর ধরে হিন্দু-মুসলমান পরস্পর মিলে মিশে তাদের ধর্ম পালন করে আসছেন। এতে হিন্দু-মুসলমানের ধর্ম পালনে কোনো সমস্যাই হয়নি।
মন্দিরের পুরোহিত শংকর ঠাকুর জানান, একশত বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেল এই মন্দির প্রতিষ্ঠার। বাপ-দাদার সময় থেকে আমরা এই স্থানে পূজা-অর্চণা করে আসছি। পাশেই মুসলমানদের মসজিদ থাকলেও আমাদের পূজায় কোনো সমস্যা হয় না।
পুরান বাজার জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা শহিনুর রহমান জানান, যখন মসজিদের আজান হয় তখন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বাদ্যযন্ত্র বন্ধ রাখে। নামাজ শেষ হলে আবার তারা তাদের পূজা শুরু করে। এই নিয়মে শত বছরের বেশি সময় ধরে আমরা আমাদের ধর্ম পালন করে আসছি। আজ পর্যন্ত এখানে হিন্দু-মসলমানের ধর্ম পালনে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি বলে জানান তিনি।
এবারে লালমনিরহাটে ৪০৯টি মণ্ডপে পালিত হচ্ছে হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা।
সোমবার সন্ধ্যায় গণপতি দেবতা শ্রী গনেশের বিবাহ অধিবাসের মধ্যে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গা উৎসব। দুর্গা পূজাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে গোটা জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে।
পূজা মণ্ডপে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তাসহ উৎসব মুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনের জন্য জেলা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলা ও ২টি পৌরসভায় মোট ৪০৯টি মণ্ডপে বসছে শারদীয় দুর্গা পূজা। আর মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন রয়েছে ৩০৪ জন পুলিশ সদস্য এবং ২ হাজার আনসার সদস্য।
এ ছাড়াও পুলিশের নেতৃত্বে ৪০টি মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক পুরো জেলার সকল পুজাম-প নিরাপত্তা বিধানে নিয়োজিত রয়েছে।
সানবিডি/ঢাকা/রাআ