#সুলাইমান রুবেল নামে কাউকে চিনি না, আমাদের কাছে টাকা জমা দিয়েছে সিদ্দিকুর রহমান সুমন: সাদ সিকিউরিটিজ এমডি
#আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এখন আদালত দেখবেন বাকিটা: তদন্তকারী কর্মকর্তা
#উনি শুরু থেকেই আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা আর অভিযোগ করে হেরেছেন সবগুলোতে। অবশেষে এসে আগামী আড়াই মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে রাজি হয়েছেন: সুলাইমান রুবেল
গ্রাহকের ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাদ সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের শর্ত সাপেক্ষে জামিন মিলেছে। গত ১৭ এপ্রিল তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে সোপর্দ করার পর গত ১৮ এপ্রিল আড়াই মাসের মধ্যে এই টাকা ফেরত দেয়ার শর্তে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, গত ৪ এপ্রিল সাদ সিকিউরিটিজের এমডির বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের কাছে পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। তাকে গ্রেপ্তার করার আগ পর্যন্ত যেন সে দেশ ত্যাগ করতে না পারে এই অনুমতি চাওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। এরমধ্যে গত ১৭ এপ্রিল পুলিশ সাদ সিকিউরিটিজের এমডিকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে গত ১৮ এপ্রিল সাদ সিকিউরিটিজের এমডিকে আদালতে সোপর্দ করলে আড়াই মাসের মধ্যে পাওনাদারের টাকা দিয়ে দেবে মর্মে শর্ত সাপেক্ষে জামিন চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। বর্তমানে সে জামিনে রয়েছে। আগামী মে মাস থেকে জুলাই মাসের মধ্যে এই পাওনা অর্ত পরিশোধ করবে মর্মে আদালতের কাছে লিখিত দিয়েছে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘আসামী যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে এ জন্য আমরা আদালতের কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম। এরমধ্যে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের কাছে সোপর্দ করেছি। এখন বাকিটা আদালত দেখবেন।’
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, সাদ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের বিদেশ গমন ঠেকাতে এবং তাকে গ্রেপ্তার করতে এই আবেদন জানানো হয়েছিল। সেই আবেদনে বলা হয়, মতিঝিল থানার মামলা নং-১৩, ১০ মার্চ ২০২৪, ধারা ৪০৬/৪২০, পেনাল কোড ১৮৬০, মামলাটি অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা। এই মামলার এজাহারনামীয় আসামী মোহাম্মদ দেলোয়ার সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য এবং এই মামলার অন্যতম প্রধান আসামী। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জানা যায় মামলাটি রুজু হওয়ার পর থেকেই এই আসামী গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য বারবার তার নিজের অবস্থান ত্যাগ করে একেক সময় একেক স্থানে অবস্থান করছে। আসামী দেলোয়ার যেকোনো সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ছাড়াও স্থল বন্দর এবং নদী বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে বিদেশেগমন করতে পারে মর্মে একাধিক বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে জানা গেছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, মামলাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের বৃহত্তর স্বার্থে পলাতক আসামী মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তারে সহায়তার লক্ষ্যে তার বিদেশ গমনাগমন রোধ করতে অত্র ইউনিটের সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা, টিম লিডার সহকারী পুলিশ কমিশনারকে অবগত করা একান্ত প্রয়োজন।
পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীর সুলাইমান রুবেল গত ১০ মার্চ মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামী করা হয় সাদ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনকে। এরপর তার স্ত্রী সামসুন নাহার ও তার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন রায়হানসহ আরও অজ্ঞাত ৪ থেকে ৫ জনকে আসামী করেন।
মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী থেকে জানা গেছে, সুলাইমান রুবেল নামে একজন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী সাদ সিকিউরিটিজে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল একটি বিও হিসাব খোলেন। যার ক্লায়েন্ট কোড ডব্লিউ ১০১ এবং বিও আইডি নং ১২০৩১৫০০৪৩৩৭০৫০৭। এরপর দুইদিন পর পে অর্ডারের মাধমে ৪ কোটি টাকা জমা করেন। কিন্তু ২০১১ সালে পুঁজিবাজারে দরপতনের কারণে শেয়ার না কিনে সাদ সিকিউরিটিজ বরাবর টাকা উঠানোর জন্য রিকুউজিশন দিলে প্রতিষ্ঠানটি টাকা দিতে অস্বীকার করে। পরবর্তীতে ডিএসই বরাবর একটি আবেদন করেন। এরপর ডিএসইর পেনাল রফিকুর রহমান পাটোয়ারী ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল আদেশ বলে কেসটি ডিসমিস করেন। পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন সুলাইমান রুবেল নামের এ বিনিয়োগকারী। এরপর আপিল কেসটি শুনানী অন্তে ডিএসই আপিলেট বোর্ড ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল আপিল মঞ্জুর করে এই বিনিয়োগকারীর পক্ষে রায় দেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদফা দুই পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রিভিউ পিটিশন মোকদ্দমাটি ডিসমিসের আদেশ দেন।
এই বিনিয়োগকারী তার মামলার তথ্য বিবরণীতে আরও উল্লেখ করেন, তার বাবা গিয়াস উদ্দিন হাওলাদারও একই দিনে সাদ সিকিউরিটিজে একটি বিও হিসাব খোলেন। যার ক্লায়েন্ট নং ডব্লিউ ১০০ আর বিও আইডি নম্বর ১২০৩১৫০০৪৩৩৭০৪৯১। তার বাবা ২০১১ সালে ৫ এপ্রিল সাদ সিকিউরিটিজে ৫ কোটি টাকা জমা করেন। এরপর তার বাবার টাকা উত্তোলনের জন্য রিকুউজিশন দিলে তা সাদ সিকিউরিটিজ দিতে অস্বীকার করে। সুলাইমান রুবেল ডিএসই বরাবর আবেদন জানালে তারা গিয়াস উদ্দিন হাওলাদারের পক্ষে রায় দেন।
আরও জানা যায়, বিনিয়োগকারী সুলাইমান রুবেল ও তার বাবার পাওনা ৯ কোটি টাকা পাওয়ার লক্ষ্যে ডিএসইর দপ্তরে একাধিকবার বৈঠক করলেও তারা টাকা দেয়ার নামে টালবাহানা শুরু করে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি বিকালে মতিঝিলস্থ সাদ সিকিউরিটিজের অফিসে পাওনা টাকা পরিশোধের বিষয়ে দুই পক্ষ আলোচনা বসে। আলোচনার এক পর্যায়ে মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ও তার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন রায়হান তাদের সাথে থাকা আরও ৪ থেকে ৫ জন অজ্ঞাত লোক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিনিয়োগকারী সুলাইমান রুবেল ও তার সাথে থাকা ব্যক্তিগত সহকারী মো. আনোয়ারুল ইলাম এবং ম্যানেজার মো. নুরুল আবছারের ওপর আক্রমণ করে কিল ঘুষি এবং লাথি মারা শুরু করে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, সাদ সিকিউরিটিজের এমডি ও তার ছেলে এক পর্যায়ে পাওনাদার বিনিয়োগকারী ও তার সাথে লোকদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। আসামীরা ব্রোকারেজ হাউজের ট্রেড পরিচালনার নিয়ম বহির্ভূতভাবে ক্লায়েন্ট কোডের জমাকৃত অর্থ অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় পাওনাদার এ বিনিয়োগকারীর পক্ষে থাকার পরও আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পাওনাদারকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে।
এ ব্যাপারে সাদ সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সুলাইমান রুবেল নামে কোনো ব্যক্তিকে আমি চিনি না। আমরা টাকা নিয়েছিলাম সিদ্দিকুর রহমান সুমনের কাছ থেকে। উনি পে অর্ডার এনেছে এবং উনার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়ে চলে গেছে। এরপর উনি শেয়ার কেনা বেচা করেছে, লেনদেন করেছে। সিদ্দিকুর রহমান সুমন হচ্ছে আমার ক্লায়েন্ট। সুলাইমান রুবেল আমার ক্লায়েন্ট না। এখন হঠাৎ করে ১০ বছর পর এসে সে বলছে সে নাকি ৯ কোটি টাকা পাবে।’
তিনি বলেন, ‘সুলাইমান রুবেল একটা হাতে বানানো পেমেন্ট ভাউচার নিয়ে এসব করতেছে। যেটাতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কারো সই নেই, কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সিলও নেই। আর আমি যার থেকে টাকা রিসিভ করছি এগুলোর সব ডকুমেন্টস তো আমার কাছেই আছে। আর সে যে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে এগুলোর ব্যাংক স্টেটমেন্ট কোর্টে বহুবার দেয়া হয়েছে। এখন আমিও তাদের বিরুদ্ধে মামলায় যাব। অলরেডি সুপ্রিম কোর্টে মামলা আছে। আর খুব শিগগিরই ডিএসই আমাদের লেনদেন আবার চালু করে দেবে বলে আশা করছি।’
বিনিয়োগকারী সুলাইমান রুবেলের দাবীকৃত পাওনা ৯ কোটি টাকা আগামী জুলাই মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিনিয়োগকারী সুলাইমান রুবেল বলেন, ‘সাদ সিকিউরিটিজের এমডি নিজেই প্রথম থেকে মামলা করছেন। একের পর এক মামলা করেছেন আর সবগুলোর তদন্ত হওয়ার পর উনি হেরেছেন। সব মামলায় হারার পর ডিএসইতে বসেছে আলোচনায়। এরপর একের পর এক টালবাহানা। দেই দিচ্ছি বলে ঘুরানো শুরু করে। ‘এখন সব শেষ এসে হেরে রাজি হয়েছেন আড়াই মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য। আগামী মে মাস থেকে জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে উনি আমাদের পাওনা ৯ কোটি টাকা ফেরত দিবেন বলে আদালতের কাছে লিখিত দিয়ে এসেছেন।’