আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালুর চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টি গৃহপালিত বিরোধীদল হলেও অনেকের আপত্তি নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভার প্রথম অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নিজের বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, একদলীয় শাসন মানে একজন সুপ্রিম লিডার থাকবেন। তিনি সবকিছুতেই জবাবদিহির ঊর্ধ্বে। তিনি ভোট করলে করতে পারেন, না করলে করবেন না। যারা নির্বাচিত হবেন তারা ওনার অনুমতি নিয়ে নির্বাচিত হবেন। নির্বাচিতরা প্রথম আনুগত্য করবেন সুপ্রিম লিডারের আর দ্বিতীয় আনুগত্য থাকবে জনগণের কাছে। আর যদি নির্বাচনে কারচুপি হয় তাহলে প্রথম ও দ্বিতীয় আনুগত্য থাকবে শুধু সুপ্রিম লিডারের প্রতিই। আমরা গৃহপালিত বিরোধীদল হলে তাদের আপত্তি নেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা গেলেও যা হয়েছে, না গেলেও তাই হতো। আমরা না গেলেও নির্বাচন হতো, জাতীয় পার্টি হয়তো যেতো। সরকারের এমন প্রস্তুতি ছিল। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলেও বর্তমান অবস্থা এমনই হতো।
বিএনপি আন্দোলনে পরাস্ত হয়েছে বলেও মনে করেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, আমি তাদের দোষ দিচ্ছি না। দেশের স্বার্থে তারা কাজ করছে, কিন্তু তারা সফল হয়নি। তাদের দোষটা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা বলছে, আমি একটা বিশাল নেতা, আমি নির্বাচনে না গেলে নাকি দেশের ভবিষ্যতই চেঞ্জ হয়ে যেতো। আমি নিজেকে এত বড় নেতা মনে করি না। আমি নির্বাচনে যেতাম আর না যেতাম দেশ এভাবেই চলতো। এমন পরিস্থিতিই থাকতো।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাকে দোষ দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করবেন না। বিএনপি বলছে, আমি নির্বাচনে না গেলেই নাকি নির্বাচন বানচাল হতো আর তারা ক্ষমতায় আসতে পারতো। এগুলো হচ্ছে নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য আমার ঘাড়ে দোষ দেওয়া।
বিরোধীদলীয় নেতা আরও বলেন, সংসদে আমি বলেছি নির্বাচন ভালো হয়নি। এমন বাস্তবতায় আর কোনো দল রাজনীতির মাঠে টিকবে না। সরকার আমাদের স্পেস দিচ্ছে না। আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছি, সরকারের সমালোচনা করছি। আমাদের দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। বিএনপিকে তো মাঠে নামতেই দেওয়া হচ্ছে না। মাঠে থাকছে শুধু আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনে কিংস পার্টির কী অবস্থা হয়েছে- এমন প্রশ্ন করে জিএম কাদের বলেন, জনগণের ওপর ভরসা রেখে রাজনীতি করতে হবে। আমি সংসদেও বলেছি, এভাবে চলতে থাকলে দেশে রাজনৈতিক দলগুলো টিকবে না। এতে দেশে চরমপন্থার আবির্ভাব হতে পারে। তাই রাজনীতি করতে হবে হয় গলায় ফুলের মালা না হয় ফাঁসির রশি। এটা যারা গ্রহণ করতে পারবে তারাই রাজনীতিতে সফল হতে পারবে। আমরা দেশকে চরমপন্থার দিকে নিয়ে যেতে দিতে পারি না। আমরা মনে করি, এটা থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব... যদি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয়।
তিনি আরও বলেন, সরকারি দলকে আমরা রাজনৈতিক দল মনে করতে পারছি না। আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার নেই। তাই দেশ পরিচালনায় জনগণের কোনো ভূমিকা নেই।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, প্রশাসনের ভূমিকা ও অর্থের অভাবে আমাদের অনেক জনপ্রিয় নেতা নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছে প্রশাসন।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম প্রমুখ।
এএ