স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়-ঝাপ

আপডেট: ২০১৫-১০-২২ ২৩:১০:৫৪


nirbachonআগামী ডিসেম্বরে সারাদেশে ৩২৩টির মধ্যে ২৪৫টি পৌরসভার নির্বাচন করবে বলে চুড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, প্রথম ধাপে ২৪৫টি পৌরসভায় ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণা করা হবে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে। এই ২৪৫টি পৌরসভায় ওয়ার্ডের সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। এছাড়া অবশিষ্টগুলোর নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হওয়া সাপেক্ষে সম্পন্ন হবে। এ ছাড়া দেশে সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ আগামী বছর মার্চের মধ্যে শুরু হবে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে এখনি দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

nirbachon 1
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশজুড়ে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। ফলে দেশের রাজনীতি এখন পৌর ও ইউপি নির্বাচনমুখী। আগামী ডিসেম্বরে আসন্ন পৌর নির্বাচনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বস্তরে চলছে নির্বাচনী আমেজ। এবারই প্রথম দলীয় প্রতিকে নির্বাচন হওয়ার ঘোষণায় এ আমেজ আরো কয়েকগুণ বেড়েছে বলে জানা গেছে।

দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে তৃণমূল আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলগুলো। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সুনজরে আসতে নানামুখী তদ্বিরও শুরু করেছেন সম্ভাব্য সব প্রার্থীরা।
জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচনের তোড়জোড় না হলেও পৌর নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নির্ধারণ হওয়ায় পৌর সংশি¬ষ্ট নেতাকর্মীরা প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। সংশি¬ষ্টদের মতে, তৃণমূল রাজনীতিতে গুণগত পরির্তন আনার এটাই মোক্ষম সময়। প্রার্থীর মেধা, যোগ্যতা ও দলে অবদান অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। এছাড়া প্রার্থীর সমাজ চেতনা, দর্শন, পরিকল্পনা, দূরদর্শিতা ইত্যাদিও বিবেচনায় আনা যেতে পারে। নৈতিকতা, মামলা ইত্যাদির বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে। টাকা, পেশী-শক্তি, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক প্রভাব ইত্যাদি অগ্রহণযোগ্য বিষয় হওয়া উচিত।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আইন অনুযায়ী ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন করতে হবে। সেই অর্থে পৌরসভা নির্বাচনের জন্য বেশি সময় নেই। এদিকে সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচগুলো দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, জেলা পরিষদ গঠন হলেও এই নির্বাচনের বিধিমালা এখনো করা হয়নি। বিধিমালা তৈরি হওয়ার পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে নারায়ণগঞ্জ এবং এরপর কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে। এদিকে আগামীতে অনুষ্ঠেয় স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে সম্পন্ন করতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম।

এ ক্ষেত্রে কমিশন এখন ভারতের স্থানীয় নির্বাচনগুলোর আইন ও বিধিমালা খতিয়ে দেখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে তাদের আইন ও বিধিমালা দেখা হচ্ছে। ভারতে পঞ্চায়েত নির্বাচন দলীয়ভাবে হয়। তাদের সঙ্গে এখনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়নি। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হবে। তারা কিভাবে নির্বাচন করে, তা জানার চেষ্টা করা হবে।

ইসি সচিব বলেন, এতোদিন স্থানীয় নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হয়েছে। সরকার সম্প্রতি দলীয়ভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য বর্তমান আইনগুলো পরিবর্তনে মন্ত্রিসভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই ধরে নিচ্ছি, দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচনের আইন হচ্ছে। যেহেতু স্থানীয় নির্বাচন সরকারের আইনে হয়, সেহেতু দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হবে। কমিশনেরও সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিধিমালায়ও প্রয়োজনীয় সংশোধন প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বর্তমানে যে আচরণ বিধিমালা রয়েছে, তা নির্দলীয় প্রার্থীদের জন্য করা হয়েছিল। এখন দলীয় ভিত্তিতে হলে বিধিমালায় সংশোধন আনতে হবে। আইন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিধিমালা পরিবর্তনের কাজ শুরু হবে। তবে কিছু কিছু প্রস্তুতির কাজ করে রাখা হচ্ছে। কিন্তু আইন না হওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই করা যাবে না। কেননা, বিধিমালা করার ক্ষমতা আইনেই দেয়া হবে।

তিনি বলেন, স্থানীয় নির্বাচনগুলো এর আগে নির্দলীয় হলেও দলীয় সমর্থন থাকে। দলের সব শক্তি তারা ওখানে নিয়োগ করে। তাই কমিশন মনে করে না যে, এটি আইনি কাঠামোয় আনার ফলে অতিরিক্ত কিছু হবে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো প্রার্থীদের গণতান্ত্রিক আচরণ। তারা গণতান্ত্রিক আচরণ করলে কোথাও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

সিরাজুল ইসলাম আরো বলেন, আইন অনুযায়ী, ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন করতে হবে। সে অর্থে পৌরসভা নির্বাচনের জন্য বেশি সময় নেই। ওই ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) জন্যও দলীয়ভাবে নির্বাচনের আইন হলে সেভাবেই নির্বাচন হবে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচগুলো দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, জেলা পরিষদ গঠন হলেও এই নির্বাচনের বিধিমালা এখনো করা হয়নি। বিধিমালা তৈরি হওয়ার পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে নারায়ণগঞ্জ এবং এরপর কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে। এদিকে আগামীতে অনুষ্ঠেয় স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে সম্পন্ন করতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম।

আওয়ামী লীগের একাধিক নীতি-নির্ধারক জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদের মতোই প্রার্থী মনোনীত করবে। তার আগে জেলা ও পৌর পর্যায়ের কমিটিগুলোকে সুপারিশ পাঠাতে বলা হবে। স্থানীয় পর্যায়ের এ সুপারিশের পাশাপাশি পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট মিলিয়ে দেখা হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনও করা হতে পারে।

এদিকে স্থানীয় নির্বাচনে জামায়াত অংশ নেয়ার বিষয়টি একেবারেই ক্ষিণ। বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায়নি। এছাড়া বাকি সব রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিতে তোড়-জোড় শুরু করেছেন। এর মধ্যে দলীয় প্রতীকে আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এ নির্বাচনে ‘কাস্তে’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন দলের প্রার্থীরা। যদিও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ জানান, স্থানীয় সরকারের কাজে নানা অন্তরায় থাকা সত্ত্বেও এর মাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়ন করা সম্ভব। জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারায় সচেতন ও শিক্ষিত করে তোলা সম্ভব। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রার্থী তালিকায় পার্টির সদস্য, কর্মী ও সমর্থক ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগরিত প্রগতিমনা, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সৎ, জনদরদি ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। বিবৃতিতে আসন্ন নির্বাচনী সংগ্রামে সর্বশক্তি নিয়ে অবতীর্ণ হতে দলের সব স্তরের নেতাকর্মীকে দ্রুত প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।