রাজধানীর রামপুরা বাজার থেকে তরঙ্গ পরিবহনের একটি গাড়িতে উঠেছেন সরকারের অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব জাকারিয়া আহমেদ। বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামার আগে হেলপারকে ৭ টাকা ভাড়া দিয়েছেন তিনি। কিন্তু হেলপার ২০ টাকার জন্য বাকবিতণ্ডা করছে। এ পথটির দূরত্ব দেড় কিলোমিটারের বেশি নয়। নতুন ভাড়া অনুযায়ী এ পথে সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা।
হেলপারের আচরণে ক্ষুব্ধ জাকারিয়া। বারবার সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়ার কথা বলছেন তিনি। হেলপারকে বলেন ভাড়ার তালিকা দেখাতে। সাধারণ যাত্রীও হেলপারকে নির্ধারিত ভাড়া আদায় করতে অনুরোধ করছেন। কিন্তু কিছুতেই মানানো যাচ্ছে না হেলপারকে। ২০ টাকার একটি টিকেট ধরিয়ে আরো ১৩ টাকা আদায় করে নেয় সে।
পরে ক্ষুব্ধ হয়েই জাকারিয়া বলেন, ‘৭ টাকা ভাড়া দিলাম আর ১৩ টাকা ভিক্ষা দিলাম।’ এতে রেগে গিয়ে হেলপার আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে জাকারিয়াকে বলেন, ‘আমরা ভিক্ষা করতে আসি নাই। ভাড়া যা তা-ই দিবেন। যাত্রী ওঠানোর সময় আমরা বলেকয়েই উঠাই। তরঙ্গ গাড়িতে বিআরটিএর কোনো আইন চলে না। এটা সিটিং গাড়ি।’
অথচ তখনো গাড়িটিতে দাঁড়িয়ে আছে কমপক্ষে ২০ জন যাত্রী। তখন ক্ষুব্ধ যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের টাকা ফেরত দিতে বলেন। এবার যাত্রীদের থামাতে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হেলপারের সঙ্গে যুক্ত হয় চালকও। সে বলে, ‘ওদেরকে মাগনা আনিনি। গাড়ির গ্যাস পুড়েছে।’
তাহলে সিটিং সার্ভিস বলা হলো কেন? যাত্রীদের এমন প্রশ্নের মুখে গোমর ফাঁস করেন চালক ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন গাড়ির পেছনে অন্যান্য খরচ ব্যতীত পুলিশ, লাইনম্যান, রাস্তার মাস্তান, মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন স্থানে দুই আড়াই হাজারের বেশি টাকা দিতে হয়। এত টাকা আমারা কোথায় পাব? যারা আইন করে তাদের পকেটেও এই টাকার ভাগ যায়। আগে ধান্দাবাজি বন্ধ করান। এরপর আইনের কথা বলবেন।’
জাকারিয়া আহমেদ বাংলামেইলকে বলেন, ‘গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির জন্য আমরাই প্রস্তাব করেছি। অথচ এখন আমরাই ভুক্তভোগী। রাস্তার পুলিশ যতদিন ঠিক হবে না ততদিন ভাড়ানৈরাজ্য বন্ধ হবে না।’
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করে সরকার। নতুন ভাড়া অনুযায়ী সিএনজিচালিত বাস ও মিনিবাসে প্রতি কিলোমিটারে বড় বাসের ভাড়া হবে ১ টাকা ৭০ পয়সা আর মিনিবাসে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা। আর সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। তবে সর্বনিম্ন ভাড়া আগের মতোই বড় বাসে ৭ টাকা ও মিনিবাসে ৫ টাকাই থাকবে। বিআরটিএর এ সিদ্ধান্ত ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলাসহ চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য।
সরকারের এই সিদ্ধান্তকে পুঁজি করে যাত্রীসাধারণ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে যাচ্ছেন বাস মালিকরা। বাসের মধ্যে কিলোমিটারের পার্থক্য অনুযায়ী নতুন ভাড়া তালিকা টাঙানোর নির্দেশ থাকলেও অধিকাংশ বাসে তা দেখা যায়নি। থাকলেও সে মোতাবেক ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। মালিকদের ইচ্ছেমতো চাপিয়ে দেয়া ভাড়া গুণতে হচ্ছে যাত্রীকে।
ঘোষণা অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাসের ভাড়া ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৭০ পয়সা ও মিনিবাসের ভাড়া ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ টাকা ৬০ পয়সা। ঢাকার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ভাড়া ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৬০ পয়সা করা হয়েছে। গত ১ অক্টোবর থেকে এ ভাড়া কার্যকর করা হয়েছে।
একইভাবে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় প্রথম ২ কিলোমিটারে ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটার ৭ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা করা হয়েছে। রাস্তায় জ্যাম বা বিরতিকালে প্রতি মিনিটে ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা করা হয়েছে। আর মালিকদের জমার হার ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার নতুন ভাড়া কার্যকর হবে। সূত্র: বাংলামেইল
সানবিডি/ঢাকা/এসএস