আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর আনুগত্যে ভাস্বর। সালাত, জিকির, দোয়া, কল্যাণের পথে আহবান, দ্বীনি আলোচনা ও আল্লাহর কাছে রোনাজারি— ইদ্যাদি ছিল তাদের হজে রুটিন ওয়ার্ক। একালের মত রেওয়াজ সর্বস্ব ছিল না।
আমরা যদি তাদের মতো করে হজ করতে পারি, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা আমাদের জীবনকেও তাদের জীবনের মতো মহিমান্বিত, আমূল পরিবর্তিত ও সুন্দর করে দেবেন।
হজের সফরে জিকির
হজের ইহরাম বাধার পর হজযাত্রী ব্যক্তি তালবিয়া পাঠ, আল্লাহর জিকির, দ্বীন শেখা ও শেখানোয় একাগ্র থাকবেন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া দুনিয়াবি কথাবার্তা বলা তার জন্য অনুচিত। (আল-মুগনি, ইবনু কুদামা : ৩/১৩৫)
জারিরি বলেন, আনাস (রা.) ‘যাতু ইরকে’ ইহরাম বাঁধেন। এরপর হজের শেষ পর্যন্ত আল্লাহর জিকির ছাড়া দুনিয়াবি-পার্থিব কোনো কথা বলেননি। (তাবাকাত কুবরা : ৭/২২)
তাহাজ্জুদ আদায়
তাহাজ্জুদের ফজিলত অনেক বেশি। তাহাজ্জুদ বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সাহায্য করে। আমারদের পূর্বসূরীরা ঘর-বাড়িতে কিংবা সফরে— কোনো অবস্থায়ই তাহাজ্জুদ ছাড়তেন না। হজের মতো পবিত্র সফরে তাহাজ্জুড় ছাড়ার তো প্রশ্নই আসে না।
আবু ইসহাক সাবিয়ি (রহ.) বলেন, তাবেয়ি মাসরুক ইবনুল আজদা’ হজকালীন সময়ে কখনোই তাহাজ্জুদ না পড়ে ঘুমাতেন না। (হিলইয়াতুল আওলিয়া : ২/৯৫)
দমরাহ ইবনু রবিয়া (রহ.) বলেন, আমরা ১৫০ হিজরি সালে ইমাম আওজায়ির সঙ্গে হজযাত্রা করেছিলাম। সেই প্রৌঢ় বয়সেও তাকে এক মুহূর্তের জন্যও বিছানায় পড়ে অলসভাবে ঘুমাতে দেখি নি। তিনি সালাতে মগ্ন থাকতেন। (তারিখু দিমাশক : ৩৫/১৯৫)
আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি
হজের পুণ্য সফরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দার দোয়া অধিক পরিমাণে কবুল করেন। ক্ষমা করে দেন সকল পাপরাশি। সালাফে সালেহিন দোয়া কবুল ও গুনাহ মাফ করানোর এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতেন না।
রবি ইবনু সুলাইমান বলেন, আমরা ইমাম শাফেয়ির সঙ্গে হজ্জে গিয়েছিলাম। তিনি অবিরত কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ১০/৫৮)
আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহ.) বলেন, আরাফাতের রাতে আমি সুফিয়ান সাওরির কাছে এলাম। তিনি তখন মাটিতে লুটিয়ে অনবরত কান্না ও রোনাজারি করে চলেছেন। আমি বললাম, এত সব মানুষের মাঝে অভাগা কে? তিনি বললেন, যে মনে করে— আল্লাহ এমন সময়েও তাকে ক্ষমা করবেন না। (হুসনুয-যন বিল্লাহ, পৃষ্ঠা : ৯২)
হজের প্রতি ভালোবাসা
বাইতুল্লাহর জিয়ারত, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, পাপমোচন ও সারা বিশ্বের মুমিন ভাইদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার চমৎকার উপলক্ষ হজ। সে জন্য সালাফে সালেহিন অধিক সংখ্যায় হজ করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা একের পর এক হজ-ওমরাহ করে যাও। কেননা, তা অভাব ও পাপ এরূপ দূর করে দেয়, যেরূপ কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রূপার ময়লা দূর করে। আর হজে মাবরুরের সওয়াব— জান্নাত ব্যতীত কিছুই নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৭১)
ইবনু শাওযাব বলেন, মক্কায় তাউসের জানাজায় অংশ নিয়েছিলাম। মানুষ বলাবলি করছিল, ওহে আবু আবদির রহমান! আল্লাহ তোমাকে রহম করুন। তুমি চল্লিশটি হজ করেছ। (আল-ইলাল ওয়া মারিফাতুর রিজাল : ২/৪৬৩)
আবু ইসহাক সাবিয়ি বলেন, আসওয়াদ ইবনু ইয়াজিদ আশি বার হজ-ওমরাহ করেছেন। আমর ইবনু মাইমুন ষাট বার হজ-ওমরাহ করেছেন। (ইবনু আবি শাইবাহ : ৭/১৫৭)
পূর্বসূরীদের মধ্যে যারা চল্লিশ বারেরও বেশি বার হজ করেছিলেন। তাদের সবিস্তর তালিকা দেওয়া অসম্ভব। উদাহরণ স্বরূপ অল্প কয়েকজনের নাম তুলে ধরছি— সাইদ ইবনুল মুসাইয়িব, আতা ইবনু আবি রবাহ, মুহাম্মাদ ইবনু সূকাহ, বুকাইর ইবনু আতিক, আইয়ুব সাখতিয়ানি, হাম্মাম ইবনু নাফি, সাইদ ইবনু সালমান, ইবনু আবি উমার আদানি, জাফার খুলদি (রহ.) প্রমুখ।
দৈর্ঘ-প্রস্থের বিচারে জীবনটা অতটা ব্যাপ্ত নয়। যাপিতজীবনের সব পাপরাশি ধুয়ে মুছে জীবনকে নূতন করে রাঙাবার সুবর্ণ সুযোগ এই হজ। সুযোগ বার বার আসে না। তাই কালবিলম্ব না করে এখন থেকেই হজযাত্রার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। হজ যেন ইবাদতময় ও সালাফে সালেহিনের মতো করে হয়— সেই চেষ্টা করুন।
এম জি