অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন আরো কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেট্রোলিয়াম রফতানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেক প্লাস। সম্প্রতি এক বৈঠকে সংস্থাটির সদস্যদেশগুলো এ সিদ্ধান্তে সম্মত হয়। প্রত্যাশার চেয়ে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে যাওয়া, শীর্ষ আমদানিকারক চীনে নিম্নমুখী চাহিদা, দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা অর্থনীতিতে উচ্চ সুদহার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্তে মূল প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। খবর রয়টার্স।
ওপেক প্লাসের বৈঠকে আগেকার বিভিন্ন উত্তোলন হ্রাসের ঘোষণার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে ২০২৩ সালের এপ্রিলের এক ঘোষণায় দৈনিক উত্তোলন সাড়ে ১৬ লাখ ব্যারেল কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এ সিদ্ধান্তের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
একইভাবে গত নভেম্বরে ঘোষিত দৈনিক ২২ লাখ ব্যারেল হ্রাসের আরেক ঘোষণারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ পর্যন্ত ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল উত্তোলন হ্রাসের আরেকটি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নও ২০২৫ সাল পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ওপেক প্লাস জোট দৈনিক ৫৮ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল উত্তোলন কমিয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। আগস্টে সরবরাহ চুক্তিতে গতকাল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম আগের দিনের তুলনায় ১৯ সেন্ট কমেছে। ব্যারেলপ্রতি মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮০ দশমিক ৯২ ডলার। অন্যদিকে গতকাল মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম (ডব্লিউটিআই) জুলাইয়ে সরবরাহ চুক্তিতে ২৩ সেন্ট কমেছে। ব্যারেলপ্রতি স্থির হয়েছে ৭৬ ডলার ৭৬ সেন্ট।
এদিকে নিম্নমুখী চাহিদার কারণে ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলো অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর পরিকল্পনা করলেও এর চাহিদা ২০৩৪ সাল নাগাদ অব্যাহত বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেয় সংস্থাটি।
গোল্ডম্যান স্যাকস জানায়, বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) নিম্নমুখী চাহিদা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ার পেছনে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে।
প্রতিবেদনে বিশ্লেষকরা বলেছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা পূর্বাভাস সংশোধন করা হয়েছে। আগের পূর্বাভাসে চাহিদা দৈনিক ১০ কোটি ৬০ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হওয়ার কথা বলা হলেও নতুন পূর্বাভাসে তা দৈনিক ১০ কোটি ৮৫ লাখ ব্যারেল ধরা হয়েছে। ২০৩৪ সাল নাগাদ জ্বালানিটির চাহিদা দৈনিক ১১ কোটি ব্যারেলে পৌঁছতে পারে।
আগামী বছরগুলোয় এশিয়ার দেশগুলোয়, বিশেষ করে ভারত ও চীনে জ্বালানি তেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বাড়বে, যা বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধিতে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করবে।
গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি দশকের শেষ নাগাদ জ্বালানি তেলের পরিশোধন কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রমও বাড়বে। ২০২৪-২৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের পরিশোধন কেন্দ্রগুলো সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারবে। এ সময় চাহিদার বিপরীতে ওই কেন্দ্রগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে।
বিএইচ