সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম সাইফুর রহমানের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার। ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা যাওয়ার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি বাহারমর্দনে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
১৯৩২ সালের ৬ অক্টোবর মৌলভীবাজারের বাহারমর্দান গ্রামে সাইফুর রহমানের জন্ম। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। মাত্র ছয় বছর বয়সে তার পিতা মারা যান। সে সময়ে তার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন চাচা মোহাম্মদ সফি মিয়া। শিক্ষাজীবন, গ্রামের মক্তব ও পাঠশালা শেষ করে তিনি ১৯৪০ সালে জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর ১৯৪৯ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আইকম পাস করে ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার ইচ্ছা নিয়ে লন্ডনে যান। সেখানে পৌঁছার পর মত পাল্টে যায় তার। ব্যারিস্টারি পড়ার পরিবর্তে পড়েন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সিতে (সিএ)। ১৯৫৩-৫৮ সময়কালে পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলশ ফেলোশিপ অর্জন করেন। এছাড়া তিনি আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষাগ্রহণ করেন।
১৯৬০ সালের ১৫ জুলাই চট্টগ্রামের শিল্পপতি ও সাবেক মন্ত্রী এম মোরশেদ খানের বোন বেগম দুররে সামাদ রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে। তিনি ১৯৭৯ সালে মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার গঠন করলে এম সাইফুর রহমান ওই বছরের ২০ মার্চ থেকে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি আবার মৌলভীবাজার-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর) এবং সিলেট-১ (সদর-কোম্পানীগঞ্জ-১) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করার পর সাইফুর রহমান অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে সংসদে ১২ বার বাজেট উপস্থাপন করে রেকর্ড করেন সাইফুর রহমান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি তিন ছেলে ও এক কন্যাসন্তানের জনক ছিলেন। ২০০৩ সালে তার স্ত্রী দুররে সামাদ রহমান ইন্তেকাল করেন।
২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের বাহারমর্দন থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে সড়ক পথে ঢাকা যাওয়ার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন খ্যাতিমান এই অর্থনীতিবিদ। শেষ ইচ্ছানুযায়ী বাহারমর্দানের নিজ বাড়িতে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস